ভেজাল মানব সমাজের একটি মারাত্মক সমস্যা। খাদ্য,বস্ত্র,ঔষধ সহ মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই যেখানে ভেজালের বিস্তার ঘটেনি।বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ সমূহে ভেজালযুক্ত পণ্যদ্রব্য মানবজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এসব দেশে ভেজালের প্রাধান্য এতই বেশি যে,সাধারণ মানুষ খাঁটি বস্তুুটিকে নকল বলে ভূল করে। এখানে লোভী ব্যবসায়ীরা আত্মকেন্দ্রিকতায় লিপ্ত হয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।বাংলাদেশের অসাধু ব্যবসায়ীচক্র অধিক লাভের আশায় প্রায়ই পণ্যে ভেজাল মেশানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।খাদ্যের মান যাচাই বা নিয়ন্ত্রণ না করে অধিক লাভের আশায় অখাদ্য – কুখাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা জনস্বাস্থ্যের জন্যে এটি মারাত্মক হুমকিস্বরুপ।ভেজাল আমাদের দেশে একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মানব জীবনে ভেজালের পরিনতি অত্যন্ত ভয়াবহ।অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করেছে বিষাক্ত কেমিক্যাল যা আহার্য হিসেবে গ্রহন করলে মরনব্যাধি ক্যান্সারসহ কিডনী ও লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়,এসব কেমিক্যাল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গলগন্ড,পেটের পীড়া,টাইফয়েড প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধিরও বিস্তার ঘটায়। ফসফরাস সমৃদ্ধ কীটনাশক শুধু যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর তাই নয়,এটি মানবজাতির জন্যে বিরাট অভিশাপ। কারণ,এসব কীটনাশক জাতীয় বিষ খাদ্যচক্র ও পরিবেশের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে মানুষের স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়াকে পরিবর্তিত করছে,তাদের প্রজনন ক্ষমতাকে করছে বিনষ্ট।
ভেজালের কুফল মারাত্মক এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। ভেজালের বিষক্রিয়া এদেশের মানুষকে নানাভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ নির্বিচারে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য খেয়ে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করছে।ব্যক্তি জীবনের মতো সামাজিক জীবনেও ভেজাল মারাত্মক হুমকিস্বরুপ।এর কারণে যেকোন সময় বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ভেজাল প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন অভিযান লকডাউনের মতো কঠোরভাবে শুরু করতে হবে। কিন্তু ভেজালের পরিধি যেভাবে বেড়ে চলছে একে প্রতিরোধ করা যেন দূঃ সাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের এবং সরকারকে নিশ্চুপ হলে চলবে না।সমাজ তথা গোটা জাতিকে বাঁচাতে হলে কঠোরভাবে এর প্রতিকার আবশ্যক। প্রয়োজনে প্রশাসন ভেজাল নিরোধক আইন আরো দৃঢ়ভাবে কার্যকরী করতে হবে। তাছাড়া প্রশাসন ভেজালকারীদের পাকড়াও করে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে অন্যরা এরুপ কাজ করতে কোনদিন সাহস না পায়।সর্বোপরি প্রশাসন এবং ক্রেতার যৌথ প্রচেষ্টায় এই ভেজাল নিরোধ করা সম্ভব।
খাদ্যে ভেজাল নিঃসন্দেহে অসৎ ব্যক্তি ও অসাধুব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাজ। এদের পাতা ফাঁদে পড়ে কত জীবন যে নিরবে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। ভেজালের সর্বনাশা বিভীষিকা থেকে মানুষের মুক্তি কখন আসবে, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় কবে হবে? জনগণের কাছে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন। অতএব যেকোন মূল্যে জনস্বার্থ সংরক্ষণে খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে হবে।
সমুজ আহমদ সায়মন
লেখক ও সাংবাদিক
বিশ্বনাথ,সিলেট।