তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাসঃ
তাকবীরে তাশরীক কোন ঘটনা থেকে শুরু হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই অধিক জানেন৷ তবে যতদুর জানা যায় তা হলোঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার জন্য মাটিতে শুয়ায়ে তার গলায় ছুরি চালাচ্ছিলেন, ঠিক সে মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন যে, একটি জান্নাতী দুম্বা নিয়ে দ্রুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে পোঁছার জন্য৷ তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) খুবদ্রুত আসছিলেন৷ কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ তখন জিবরাঈল আঃ আশংকা করলেন যে, তিনি পৌঁছার পূর্বেই বুঝি ইসমাঈল (আঃ) জবাই হয়ে যাবেন৷ তাই তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন
-الله أكبر، الله أكبر،
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর তাকরীর শুনে হযরত
ইবরাহীম (আঃ) বলে উঠলেন-
لا إله إلاالله والله أكبر
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার
আর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তাকবীর শুনে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেন-الله أكبر ولله الحمد.
.আল্লাহু আকবার অলিল্লাহিল হামদ
এভাবে তিন জনের যিকিরকে একত্রিত করে হয়েছে তাকবীরে তাশরীক৷
তাকবীরে তাশরীক
الله أكبر، الله أكبر،
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
لا إله إلاالله والله أكبر
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার
الله أكبر ولله الحمد.
আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ মহান এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৬৯৬ হাদীস৷
তাকবীরে তাশরীকের বিধান ও আমাদের করণীয়ঃ
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ فِیْۤ اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ.
আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর (আইয়ামে তাশরীকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে। (সূরা বাকারা ২০৩ আয়াত৷)
১। সুতরাং ৯-ই জিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩-ই জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত ৫-দিনে মোট ২৩-ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালিগ পুরুষ-মহিলা, মুকীম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী, জামাতে নামায আদায়কারী-একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৬৭৭ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ৮/১৫২ পৃষ্ঠা৷
২। মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে এবং মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে (তবে এতটুকু আওয়াজে যে পাঠকারী যেন কানে শুনতে পায়) পাঠ করা ওয়াজিব৷ সুতরাং পুরুষগণ নিম্নস্বরে এবং মহিলাগণ উচ্চস্বরে পাঠ করলে ওয়াজিব আদায় হবেনা৷ (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷
৩ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই পাঠ করা ওয়াজিব৷ সুতরাং ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে মুক্তাদীগণের জন্য তাকবীর বলা ওয়াজিব৷
৪৷ মাসআলাঃ
মাসবুকের জন্যও তার ছুটে যাওয়া নামায আদায় করে সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/২৩৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷
৫। মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব হবেনা৷ কেননা তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। (ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৯ পৃষ্ঠা৷
৬। মাসআলাঃ
জামাতে নামায আদায়কালে সালাম ফিরানোর পর যদি সকলেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে যায়, তবে যতক্ষন মসজিদে থাকবে এবং নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ না করবে, ততক্ষন পর্যন্ত সকলের উপরই তাকবীর পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর যারা নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করে ফেলেছে, তাদের উপর তাকবীর পাঠের ওয়াজিব।
লেখক হাফেজ মাওলানা মুফতি আশরাফুল ইসলাম, খুলনা।
Leave a Reply