মো নাহিদ হাসান নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর সীমান্ত ঘেষা উপজেলা পোরশায় অবস্থিত ‘কুড়ে ঘর ম্যাংগো রিসোর্ট’ এখন সাড়া ফেলেছে নেট দুনিয়াসহ সারা দেশে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরা এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছে এই রিসোর্টে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এই রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কুড়ে ঘর ম্যাংগো রিসোর্টটি নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের নোনাহার পশ্চিমপাড়া গ্রামে অবস্থিত। জানা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ ২০২১ সালে পোরশা উপজেলার নোনাহার গ্রামে এসে আমবাগান তৈরি করার জন্য স্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট থেকে ৬০বিঘা জমি লিজ নেন। লিজ নেওয়া ওই জমিতে বিভিন্ন জাতের আম, পেয়ারা, ড্রাগন, আখ ও কফি চাষ শুরু করেন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ। পাশাপাশি সেখানে তিনি গরু খামারও তৈরি করেন। তিনি তার বাগান এবং খামার দেখাশোনা করার জন্য এখানে এসে থাকার জন্য প্রথম দিকে দুটি ঘর তৈরি করেন। তার তৈরিকৃত বাগান ও থাকার দুটি ঘরের ছবি ও ভিডিও তিনি তার ফেইসবুক আইডিতে এবং তার অপর একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন। এগুলোর পোস্ট দেখে প্রথমে তার বিভিন্ন এলাকার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন এখানে ঘুরতে আসেন। তার ওই দুটি ঘরে বেশি মানুষ থাকতে সমস্যা হলে তিনি পরবর্তীতে আরও কিছু ঘর তৈরি করেন। আর সেগুলোর ছবি ও ভিডিও তিনিসহ সেখানে বেড়াতে আসা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনরা তাদের ফেইসবুকে পোস্ট করলে বেড়ে যায় প্রচার। প্রতিদিন এখানে দেখার জন্য আসতে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। এখানে যারা বেড়াতে আসেন তারা এই ঘরগুলো দেখে বিমোহিত হন। গ্রামের পরিবেশ, নির্মল বাতাস, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন, নানা বৈচিত্র আর সবুজের সমাহার উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীরা এখানে রাত্রী যাপনের ইচ্ছে পোষণ করতেন। প্রতিদিন আলাদা-আলাদা দর্শনার্থীদের একই আবদার শুনতে-শুনতে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ। আর এর নাম দেন ‘কুঁড়ে ঘর ম্যাংগো রিসোর্ট’। দর্শনার্থী ও ভ্রমণপ্রেমীদের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে এ রিসোর্টে তৈরি করা হয়েছে ৭টি রুম। এর মধ্যে রয়েছে ২টি ফ্যামিলি রুম, ৪টি সিঙ্গেল রুম ও ১টি কমন রুম। এখানে এক রাতে ৭ রুমে ২০ জন থাকতে পারে। ১ রাত ফ্যামিলি ও কমন রুমের ভাড়া ৬শ টাকা। সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ১ জন ২শ ও ২জন ৩শ টাকা। এখানে রয়েছে অ্যাটাচ ও কমন বাথরুম, বিদ্যুৎ এবং পানির ব্যবস্থা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নোনাহার পশ্চিমপাড়া গ্রামের মধ্যে পাকা রাস্তা শেষ হয়ে প্রায় ২শ ফিট মেঠো পথ পেরুলেই কুঁড়ে ঘর ম্যাঙ্গো রিসোর্টের গেইট। আম বাগানের মধ্যে মেঠো রাস্তার ধারে তৈরি করা হয়েছে রিসোর্টটি। মাটির তৈরি সারি-সারি ঘর, আঙ্গিনায় সারি-সারি ফুল গাছ। তাল পাতা দিয়ে ঘেরা আঙ্গিনা। আঙ্গিনায় পিঠ পেতে বসতে ডাকছে দড়ির তৈরি খাট। খাটে দেওয়া আছে বালিশ। চারিদিকে সবুজে ঘেরা। উপরে তাকালে নীল আকাশ। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। স্থানীয় বাঁশের কঞ্চি ও মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘর। প্রথমে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বেড়া। বেড়ার উপর দেওয়া হয়েছে মাটির প্রলেপ। পাশের বিলের বিন্না দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘরের চাল। ঘরের ভিতর থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে খাট, মেঝেতে রয়েছে কার্পেট। ৩বেলা খাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে এখানে। রিসোর্টটি দেখাশোনার জন্য রয়েছে ২জন কর্মচারী। রিসোর্ট ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এলকোহল, ধুমপান ও অবৈধ নারী-পুরুষ এখানে অ্যালাও না। বিবাহিত ছেলে-মেয়ে এক সাথে থাকতে চাইলে তাদের বিয়ের কাবিননামা ও ভোটার আইডি কার্ড জমা নেওয়া হয়। রিসোর্টে থাকাকালিন যারা এখানে খেতে চান তারা খরচ দিয়ে খেতে পারবেন। প্রায় সময় রুম বুকড থাকে, তাই এখানে আসার ২দিন আগেই জানিয়ে আসতে হবে। কুঁড়ে ঘর ম্যাংগো রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, তিনি মূলত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। প্রথম দিকে তিনি এখানে এসে আমবাগান তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে তিনি গরুও পালন করতে থাকেন। পোরশা এলাকা তার কাছে কিছুটা পার্বত্য রাঙামাটি এলাকার মত মনে হয়। তার এই প্রজেক্টগুলোর ছবি এবং পোরশা এলাকার নিজস্ব ঐতিহ্য এবং এ এলাকার উঁচু-নিচু বরেন্দ্র ভূমির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তার ফেইসবুক ও ওয়েবসাইটে পোস্ট করলে বিভিন্ন মানুষ এখানে আসতে চাইতেন। মানুষের চাহিদা মেটাতে তার এই রিসোর্ট তৈরি করা। রিসোর্টটিতে মানুষের বেশ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে এসে রাত্রীযাপন করছেন। আগামীতে তিনি এখানে কমিউনিটি ট্যুরিজমের ব্যবস্থা ও বোর্ড হাউজ করাসহ পোরশাকে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ।