ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিপন মল্লিক (৫০) হত্যার ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিপন মল্লিকের ছেলে রিয়াজ মল্লিক। মামলায় এক নম্বর আসামী করা হয়েছে পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিরিন আক্তার (৩৫) কে এবং অজ্ঞাত আরও তিন জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ঝালকাঠি সদর থানায় এই মামলা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বুধবার সকালে শিরিন আক্তারকে ঝালকাঠির আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, ওই নারী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি। গত সোমবার রাতে ঝালকাঠি পৌর শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় রিপন মল্লিকের প্রতিবেশী সৌদিপ্রবাসী কামাল হোসেনের স্ত্রী শিরিন আক্তারের ঘরে রিপন মল্লিকের লাশ পাওয়া যায়। মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি পরিবারের। পুলিশ রাতেই তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
মামলার বাদী রিপন মল্লিকের ছেলে রিয়াজ মল্লিক জানান, প্রতিবেশী সৌদিপ্রবাসী কামাল হোসেনের স্ত্রী শিরিন আক্তারের ঘরে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই নারীর কাছে তাঁর বাবা রিপন মল্লিক জমি বিক্রির দুই লাখ টাকা পেতেন। ছয় মাস আগে রিপন মল্লিককে উড়োচিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরিবার থেকে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলা হলেও রিপন করেননি। জমির পাওনা টাকা না দেওয়ার জন্যই শিরিন আক্তার একটি চক্রের সহায়তা নিয়ে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে নাটক সাজিয়ে ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন রিয়াজ মল্লিক। রিপন মল্লিক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি জমি ক্রয়-বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
হত্যাকান্ড বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আল আমিন বলেন, রিপন মল্লিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটি মহল মৃত ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
শিরিন আক্তারের বোনের ছেলে লিয়ন হোসেন বলেন, আমার খালা-খালু রিপন মল্লিকের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। সেই সুবাদে রিপন মল্লিক আমার খালার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। তবে ঘটনার দিন কেন রিপন মল্লিক খালার ঘরে এসেছিলেন, তা আমার জানা নেই।
নিহত রিপনের ভাই সমির মল্লিক বলেন, আমাকে স্থানীয়রা ফোনে জানায়, ভাইকে মেরে মাথা ফাটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খবর শুনে শিরিনের বাসায় গিয়ে দেখি, সে ঘরেই বসা ও স্বাভাবিক। ভাইয়ের লাশ হাসপাতালে নিয়ে গেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, রিপন মল্লিক প্রায়ই সৌদিপ্রবাসী কামালের স্ত্রী শিরিন আক্তারের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। ঘটনার দিন শিরিন তাঁর ঘরে একা থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। শিরিনের ছেলে ইমন হোসেন ঘটনার সময় ঢাকায় অবস্থান করছিল।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুহিতুল ইসলাম বলেন, লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার শিরিন আক্তারকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়ার প্রার্থনা করা হবে।