মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ
ফাতেমা খানম মৌ নড়াইলঃ
নড়াইলে ৭১-মুক্তিযুদ্ধে সত্য ঘটনার গণহত্যার ওপর নির্মিত ‘অনেক প্রাণের নামে কিনেছি’ নাটকে এক রাজাকারের চরিত্রে অভিনয় করায় ওই নাট্যাভিনেতাকে চাপ দিয়ে নাটকের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে এ নাকটিকেও বিতর্কিত উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের মাঝ চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শুক্রবার (১৪জনিুয়ারী) মুক্তিযোদ্ধা, জেলা শিল্পকলা একাডেমী এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রাশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাথে দেখা করে এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন,মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমাল লিটু, জোটের সহ-সভাপতি মাহবুব-ই-রসুল, শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ হানিফ, নাটকের নির্দেশক শহিদুল্লাহ শাহীন প্রমুখ।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় লোহাগড়ার ইতনা ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৭১-মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলের ইতনায় পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ‘অনেক প্রাণের নামে কিনেছি’ নাটকের মঞ্চায়ন হয়।
এ নাটকে জেলা বিএনপি নেতা ৭১- নড়াইল থানা রাজাকার কমিটির সাধারন সম্পাদক আওয়াল মন্ডলের চরিত্রে নড়াইলের কবি আবু বক্কার অভিনয় করেন। নাটক মঞ্চায়নের দু’তিন পর মোস্তফা কামালের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে নড়াইলের আলো পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়“নড়াইলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আওয়াল মন্ডলকে নিয়ে বিতর্কিত নাটক করায় ভুল স্বীকার করলেন কবি আবু বক্কার”। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলেছেন, আওয়াল মন্ডল আমার দুলাভাই ছিলেন। আমার জানামতে সে একজন সমাজসেবক ও খুব ভালো লোক ছিল। নড়াইলবাসী তাকে কে কি বললো সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তার চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু বুঝতে পারিনি। তাই এ বিষয়ে আমি লজ্জিত”।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, আমরা সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিন্দা, ক্ষোভ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। যারা ৭১-এর গণহত্যা নিয়ে রচিত পরিবেশ থিয়েটারকে বিতর্কিত বলেছে এবং বিবিৃতি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার দাবিতে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে গিয়েছি। তিনি যদি কোনো পদক্ষেপ না নেন তাহলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সকল মানুষকে নিয়ে রাজপথে নামবো।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন,শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে নড়াইলের ইতনায় ৭১ সালে গণহত্যা নিয়ে যে পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চায়ন হয়েছে সেখানে আবু বক্কার নামে এক ব্যক্তি তৎকালীন নড়াইল থানা রাজাকার কমিটির সাধারন সম্পাদক আওয়াল মন্ডলের চরিত্রে অভিয়নের পর যে বিবৃতি দিয়েছে আমি তাকে ধিক্কার জানাই। এর সাথে যারা জড়িত এবং যারা এই নাটকটিকে বিতর্কিত বলেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ জানিয়েছি।
জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু নড়াইলে ৭১-এর গণহত্যা নিয়ে রচিত নাটককে যারা বিতর্কিত নাটক বলে মন্তব্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারী) বিকেলে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক সভায় বক্কর মোল্যা হাজির হয়ে বে
লন, আওয়াল মন্ডেলের ছেলে আজিজ মন্ডলসহ কয়েকজন তাকে কয়েকদিন চাপ প্রয়োগ করে এ বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছেন। তিনি এজন্য সাংস্কৃতিক জোটের সভায় সবার কাছে দুঃখ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সভায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুন্ডু, সাধারন সম্পাদক শরফুল আলম লিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, কবি আবু বক্কর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় ১৯৭১ সালের সত্য কাহিনী নিয়ে রচিত ‘অনেক প্রাণের দামে কিনেছি’ নাটকে জেনে-শুনে-বুঝে অভিনয় করেছেন। তিনি এর বিপক্ষে যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটা সঠিক হয়নি,এটা অনভিপ্রেত। আবু বক্কর নড়াইল শিল্পকলা একাডেমীতে নতুন করে বিবৃতি দিবেন, সেটা সাধারণ ডায়রী হিসেবে পরিণত হবে এবং এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, নাটকটিতে ১৯৭১ সালের ২৩ মে নড়াইলের ইতনায় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনাকে তুলে ধরা হয়। ২৩মে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে পাখির মতো গুলি করে একে একে ৩৯ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করে এবং অর্ধশত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।