এশিয়ান এক্সপ্রেস২৪.কম
পৃথিবীতে অনেক কিছুই অদ্ভুদ। আজ বাস্তবতার নিরিখে এমনই একটি সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন ইন্ডিয়ার এক লেখক।
তার লেখনিতে জেনে নেই মসজিদটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
এটা হিন্দুদের গ্রাম। এখানে একটাও পরিবার মুসলমান নেই। আশে পাশের ১০/১৫ কিলোমিটার ঘুরে এলেও একজন মুসলমান খুঁজে পাবেন না। এই গ্রামে একটা মসজিদ রয়েছে প্রায় ১৫০ বছরের পুরানো। প্রতিদিন সকালে মসজিদটি
ধোওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত মুখরিত হতে থাকে আজানের ধ্বনি।
এ গ্রামের কেউ আজান দিতে পারেন না। বাইরে থেকে একজন মৌলবী আনা হয়েছিল অনেক আগে। তিনিই আজান দিতেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। নিজেদের সাধ্যমতো তাঁর মাইনের ব্যাবস্থা করেছিলেন, গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু, মৌলবী বেশীদিন থাকেন নি।
আজান দেবে কে ? গ্রামের কোনো হিন্দু ভাই আজান দিতে পারেন না। অগত্যা, টেপ রেকর্ডার, লোড করা আজান বাজিয়ে দেওয়া হয় যথা সময়ে।
নিশ্চয় ভাবছেন ! এমন অভুতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন এমন আশ্চর্যতম মসজিদ কোন দেশে অবস্থিত ? এর খুজে আপনাকে বেশীদুর যেতে হবে না। এটা আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের “নালন্দা ” জেলার “মারী গাঁও ” তে অবস্থিত।
১২ টি সুউচ্চ মিনার, ৩ টি বিশাল গম্বুজ নিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মসজিদ। কোনো এক সময় হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে বসবাস করতেন এই গ্রামে। দেশভাগের সময় (১৯৪৭) বহু সংখ্যালঘু পরিবার চলে যান এই গ্রাম থেকে। কিছু অবশিষ্ট মানুষ ছিলেন, তাঁরাও রুটি রুজি রোজগারের খোঁজে শহরে চলে গেছেন।
মসজিদটি জনমানব শুন্য হয়ে পড়ে।
সেই থেকেই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আগলে রেখেছেন এই মসজিদ টি কে। বর্তমানে মসজিদটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামের অমুসলিম মানুষ নিজেদের সাধ্যমতো চাঁদা দিয়ে তা সারানোর এর কাজ শুরু করেছেন।
গ্রামে কোনো উৎসব অথবা দেওয়ালীর দিন মন্দিরের সাথে সাথে এই মসজিদ ও আলোক-সজ্জায় সেজে ওঠে।
গ্রামে কোনো বিবাহ হলে আজও মন্দিরের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে। কেউ মারা গেলে শবদেহ মসজিদের পাশ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
খবরটি শুধু হৃদয়কে শান্তি দিলো না,,,
মনে অসীম সাহস যুগিয়ে দিলো। এখনো
আমার প্রিয় দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বর্তমানে ক্ষনিকের ঝড় চলেছে মাত্র। একদিন কেটে যাবে।
এই গ্রামের সকল মানুষকে সালাম।
সালাম এই জন্য নয় যে, তাঁরা এই মসজিদ বাঁচিয়ে রেখেছেন !!
বরং, সালাম এইজন্য যে, তাঁরা দেশের
আত্মাকে জীবন্ত রেখে চলেছেন।
লেখক: প্রেমানন্দ দাস, বৃন্দাবন, ভারত।