ডেস্কঃ
ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে গাজা উপত্যকার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস। বিবৃতিতে তারা বলেছে, গাজা থেকে ইসরাইলের দিকে রকেট হামলা শুরু হয়েছে। একজন নারী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গাজাকে টার্গেট করা শুরু করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। তারা দাবি করেছে গাজা থেকে বেশ কিছু ফিলিস্তিনি যোদ্ধা অনুপ্রবেশ করেছে ইসরাইলে। এ জন্য তেলআবিব সহ ইসরাইলের কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে শীর্ষ নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এ অবস্থার মধ্যে আল জাজিরার সাংবাদিক বলছেন, গাজা উপত্যকা থেকে রকেট নিক্ষেপ শুরু হয়েছে। এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ইসরাইলি সেনা নিহত ও তাদের গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরকে সেলিব্রেট করতে দেখা গেছে।
দু’জন ইসরাইলি সেনাকে আটক করার ভিডিও পাওয়া গেছে। এতে তাদেরকে জীবন্ত অবস্থায় দেখা যায়।
ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ বলেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সব কাটিয়ে উঠতে পারবো। গাজা থেকে আক্রমণের ফলে খুব কঠিন একটি সময়ের মুখোমুখি ইসরাইল। ইসরাইলে যারা হামলার মুখে রয়েছেন, সেইসব নাগরিকদের উৎসাহ ও শক্তি দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, গাজা হলো ফিলিস্তিনের একটি ছোট্ট ভূখণ্ড। এটা স্বশাসিত। তবে তাদের দিকে হাত বাড়িয়েছে ইসরাইল। তারা পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেমসহ ওই উপত্যকাকে দখল করে নিতে চায়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকেই এই ধারা শুরু হয়েছে। গাজা উপত্যকার সীমান্তে রয়েছে ইসরাইল ও মিশর। ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত এই উপত্যকার আয়তন প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার। আকারে যা কেপটাউন, ডেট্রয়েট অথবা ভারতের লক্ষেèৗয়ের সমান। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে গাজা ছিল ফিলিস্তিনের অংশ। ১৯৪৮ সালে জাতিনিধন, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সৃষ্টি করা হয় ইসরাইল। ১৯৪৮ সালের ওই যুদ্ধের সময় গাজা ছিল মিশরের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তা তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। প্রতিবেশী অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে ফিলিস্তিনের অন্য ভূখণ্ডগুলো দখল করে নেয় ইসরাইল।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মূল ইস্যুগুলোর অন্যতম হলো গাজা। যদিও এটা এখন ইসরাইলের দখল করে নেয়া ভূখণ্ডের অন্তর্গত, তবু গাজা উপত্যকাকে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় ইসরাইল সৃষ্টির সময়। তখন থেকেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিভিন্ন ইস্যুতে নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে ইসরাইল। ২০০৭ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত দখলীকৃত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর ব্লকেড আছে। সেখানে আকাশসীমা, সমুদ্রসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। গাজার আকাশপথ, জলপথ ও তিনটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের মধ্যে দুটি নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল। তৃতীয় ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করে মিশর।
ওদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বৈষম্যহীনভাবে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেফানি হ্যালেট। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি বলেছেন, ইসরাইলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে হামাসের বৈষম্যহীন রকেট হামলার নিন্দা জানাই। ইসরাইলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের রক্ষায় ইসরাইলকে আমরা পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দিচ্ছি। সুত্র: মানব জমিন।