মো নাহিদ হাসান নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ফায়ার ফাইটার রবিউল ইসলাম রবিনকে (২৭)। গত শনিবার (৪ জুন) রাতে সীতাকুণ্ডে কনটেইনার বিস্ফোরণের পর আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন রবিন।
২৭ বছর বয়সী রবিনের বাড়ি নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া মহল্লার পূর্বপাড়ায়। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় রবি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দেড় বছর আগে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে।
টেলিভিশনের সংবাদ দেখে রোববার রবির নিখোঁজের খবর পায় পরিবার। তারপর থেকেই তারা ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কোথাও কোনো খোঁজ মিলছে না রবির। ভেঙে পড়েছে পরিবারের সবাই।
৯ বছর বয়সী রিমঝিম জানায়, তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় শনিবার সকাল ৯টার দিকে। ভাই নিখোঁজের খবর পেয়ে কিছুতেই তার কান্না থামছে না।
কাঁদছে আর মাকে বলছে, ‘আম্মু, ভাইয়া ফোন রিসিভ করে না কেন? আমি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলব। টিভিতে দেখাচ্ছে অনেক মানুষ মারা গেছে। আম্মু, আমার ভাইয়া তো সুস্থ আছে তাই না? আল্লাহ যেন ভাইয়াকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়।’
বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাত ৯টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস খবর পায় ৯টা ২৫ মিনিটে। রাত ১১টার দিকে শুরু হয় বিস্ফোরণ। কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের শব্দে ভেঙে যায় আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাঁচ।
একে একে বের করা হয় হতাহতদের। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ এ। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আছেন নয়জন। নিখোঁজের তালিকায় থাকা ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মীর মধ্যে রবিন একজন।
রবিনের মা ফাইমা বেগম জানান, শনিবার এশার নামাজের পরে ছেলে রবিনের কাছে ফোন করলে সে ব্যস্ত থাকায় সঙ্গে অল্প কথা হয়। রোববার ভোর ৫টার দিকে মা ফাইমা বেগম আবারও রবিনের ফোনে কল করেন। এ সময় রবিনের অফিসের এক ব্যক্তি ফোন কলটি রিসিভ করে বলেন, ‘আপনার ছেলে রবিন আগুন নেভাতে গেছে। তার জন্য দোয়া করবেন।’ এরপর সকাল ৮টার দিকে টেলিভিশন চালু করলে চট্টগ্রামে আগুনের খবর দেখতে পান ফাইমা বেগম।
রবিনের মামা হাসান আলী বলেন, ভাগিনা বাড়ি করে বিয়ে করবে। এখন তো মনে হচ্ছে সে না ফেরার দেশে চলে গেছে। তার কোনো খোঁজ মিলছে না। পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়বে। আমরা চাই ভাগিনা ফিরে আসুক। পরিবারটিতে আনন্দ বিরাজ করুক।