নড়াইল প্রতিনিধিঃ বর্তমান সময়ে আলোচিত সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও তার পরিবারের অতীত সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসছে। পরীমনি গ্রেফতারের পর তার বাবার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গ্রেফতারকৃত চিত্রনায়িকা পরীমনিার জীবনের নানা অধ্যায় উন্মোচিত হলেও তার পিত্রালয়ের স্বজনেরা মুখ খুলতে চান না। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সালামাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোল্যা জহুরুল হকের দ্বিতীয় পুত্র মনিরুল ইসলাম ছিলেন পরীমনির জন্মদাতা। পরীমনির বাবার ডাক নাম ছিল মনি। সুদর্শন পুরুষ পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলামের জীবদ্দশায় একের পর এক প্রেম, অতঃপর বিয়ে করেছিলেন। স্বামীর পরকীয়ার লজ্জায় দ্বিতীয় স্ত্রী তথা পরীমনির মা সালমা সুলতানা নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার পর এক এক করে আরো চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন পরীমনির বাবা। সর্বশেষ ৫ম স্ত্রী ছোট ভাই শরিফুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়া করে বিয়ে করে বর্তমানে তারা ঘর-সংসার করছেন।
পরীমনির বাবা প্রথমে নড়াইলের লোহাগড়ায় বিয়ে করার পর স্ত্রী বিয়োগ হন। এরপর পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর সীমান্তের ( সিংহখালী গ্রাম সংলগ্ন ) ভগিরথপুর বাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে কনেস্টবল হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন স্মৃতির (পরীমনি) বাবা মনিরুল ইসলাম পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে সিংহখালী গ্রামের সামছুল হক গাজীর বড় মেয়ে সালমা সুলতানাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। পরী মনির নানা সামছুল হক গাজী ভগিরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরীমনির জন্ম ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর বাকা গ্রামে। জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোট্ট স্মৃতিকে নিয়ে বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সয়নি পরীর কপালে। ১৯৯৭ সালের দিকে কালিয়া পৌর শহরের পাইলট স্কুলের বিপরীতে ‘ক্যাফে ঝিল’ নামক একটি কফি শপের ব্যবসা পরিচালনা করেন মনিরুল ইসলাম। এ সময়ে পৌর শহরের চাঁদপুর গ্রামের সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম শেখের ভাড়া বাড়ীতে থাকাকালীন এক সন্ধ্যায় রান্না করার সময় আগুনে দগ্ধ হন পরীমনির মা সালমা সুলতানা। মুমূর্ষু অবস্থায় সালমা সুলতানাকে নিয়ে পরীর নানা সামছুল হক গাজী পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কিছুদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তখন পরীমনির বয়স ছিল ৩ বছরের কম। তার মৃত্যুর বিষয়টি ছিল অনেকটা রহস্যজনক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা খবর কে জানিয়েছেন,পরীমনির বাবার পরকীয়া প্রেমের লজ্জায় তিনি ইচ্ছাকৃত গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরীমনির বাবা এক এক করে পাচঁটি বিয়ে করেছেন। পরীমনির মায়ের মৃত্যুর পর খুলনা জেলার সেনহাটি এলাকায় পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম বিয়ে করেন। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ওই মহিলার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের জেরে পরীমনির মা আত্মহত্যা করেন। ৩য় স্ত্রী থাকার পরও উপজেলার মাউলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের জৈনক কাজল বেগমকে ৪র্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন মনিরুল। এই স্ত্রী’র ঔরসে একটা কন্যা সন্তান রয়েছে। যার বর্তমান বয়স ২৩/২৪ বছর। এরপর বরিশালে আরো একটি বিয়ে করেন পরীর বাবা। বর্তমান এই ৫ম স্ত্রী সঙ্গে পরকিয়া করে পরীমনির ছোট চাচা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে সংসার করছেন।
জানা গেছে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশে সদস্য পদে চাকরি করতেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বদমেজাজী বা উম্মত্ত স্বভাবের হওয়ায় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে চাকরিচ্যুত হন তিনি। এরপর সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখান থেকে ৫/৬ বছর পর দেশে ফিরে জড়িয়ে পড়েন রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসায়। অল্প দিনের মধ্যে রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ঢাকায় ভূমি কেনা বেচা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। শৈশবে মাতৃহারা পরীমনি প্রায়ই পিরোজপুরে তার নানা বাড়ি গিয়ে থাকতেন। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে শৈশব ও কৈশোরবেলা কাটে অভিনেত্রীর। নানাবাড়িতে থেকেই পরীমনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তবে ২০১১ সালের দিকে পরীমনিকে নিয়ে সাভারের ব্যাংক টাউনে এক সাবেক নামকরা পুরুষ মডেলের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এ বাড়ির দোতালায় তারা বসবাস করতেন। এ সময় পরীমনি সাভার কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম জমি কেনা-বেচার জের ধরে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার মাদবপুর থানায় সড়কের পাশে তার বাবার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
পরীমনির সেজ চাচা ইকরামুল ইসলাম খবরের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি শেখ ফসিয়ার রহমানকে জানান, নিহত মনিরুল ইসলাম গাজীপুরে একটি ক্রয়কৃত জমির কেয়ারটেকার হিসেবে বরিশালের জনৈক রাহাত (২৫) নামের এক যুবককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ঘটনার দিন মনিরুল ইসলাম অন্য একটি জমি ক্রয়ের উদ্দ্যেশে মোটা অঙ্কের টাকাসহ কেয়ারটেকার রাহাতকে সঙ্গে নিয়ে সাভার থেকে গাজীপুর যাওযার পথে নিখোঁজ হন। দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলামের লাশ ওই দিনই পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে ওই এলাকার কবরস্থানে দাফন করেন। পরে খোঁজ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে পরীমনি ও তার চাচারা মাদবপুর থানায় গিয়ে সেখানে সংরক্ষিত কাপড়সহ অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস দেখে শনাক্ত করেন। এরপর ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সে লাশ কবর থেকে তুলে নিজের গ্রামের বাড়িতে আনেন পরীমনি ও তাঁর স্বজনরা। মনিরুলের পরিবারের ধারণা, রাহাত ও তার সহযোগীদের ষড়যন্ত্রেই তাকে খুন করে দুর্বৃত্তরা।
এরপর থেকে পরীমনি একা হয়ে পড়েন। সাভারে তার এক খালার বাসায় থাকতেন। এ সময় উক্ত মডেল পরীমনিকে মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ করে দেন। একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিনোদন জগতে পা রাখলেন এই রুপসী পরীর মত সুন্দরী তরুণী শামসুন্নাহার স্মৃতি। এরপর নিজে নিজে ধারণ করেন নানীর আদর করে ডাকা নাম ‘পরী’ আর বাবার ডাক নামের ‘মনি’ উভয় নামের সম