আজহারুল ইসলাম সাদী, স্টাফ রিপোর্টারঃ নোয়াখালীতে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার বিচার দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট সংলগ্ন (শহীদ স.ম আলাউদ্দিন চত্বর) এর সামনে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কে, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের উপস্থিতিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মুনসুর রহমান এর সভাপতিত্বে ও সাতক্ষীরা অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদ হোসাইন এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল ওয়াহাব খান চৌধুরী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর খায়রুল আলম, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর আমিনা বিলকিস ময়না, আলী নূর খান বাবুল, এসএম শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন, সৌরভ প্রমুখ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ” বার্তা বাজার ” এর নোয়াখালী প্রতিনিধি সাংবাদিক বুরহানউদ্দিন মুজাক্কির কে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা কান্ডের ঘটনার জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক বিচারে দাবি জানানো হয়।
উল্লেখঃ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিতে তার মুখের নিচের অংশ এবং গলা ঝাঁজরা হয়ে যায়।
জানা যায়, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ১০-১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে।
ওই সংঘর্ষে সাংবাদিক মুজাক্কিরসহ ৯ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে শনিবার রাতে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
২৮ বছর বয়সী মুজাক্কির মুজাক্কির ‘দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার’ ও অনলাইন পোর্টাল ‘বার্তা বাজার’র স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের নোয়াব আলী মাস্টারের ছেলে। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন মুজাক্কির।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, মির্জা কাদের ও বাদলের অনুসারীদের ধাওয়া ও সংঘর্ষের ছবি তোলার সময় হামলাকারীরা মুজাক্কিরের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় তার মোবাইল ফোন ফেরত চাইলে হামলাকারীরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে।
এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মুজাক্কির।
দাবি উঠেছে, ঘটনাস্থলের দোকানগুলোতে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের মুজাক্কির কাদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তা সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে।
বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা মুজাক্কিরের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বলেন, সাংবাদিক মুজাক্কির একজন ভালো সাংবাদিক ছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালনের সময় সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে বাদলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে।
অপরদিকে বাদল গত শনিবার চাপরাশিরহাটে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুজাক্কির তার এলাকার ছেলে। ২০১৯ সালে তিনি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, তখন মুজাক্কিরসহ তার অনেক সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন কাদের মির্জা। সে মামলার সব খরচ বাদল বহন করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার লোকজন মুজাক্কিরকে গুলি করে হত্যা করেছে।
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে সাংবাদিক মুজাক্কির কার গুলিতে নিহত হলেন? পুলিশ বলছে, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে ও সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। কিন্তু পুলিশের গুলিতে কেউ হতাহত হয়নি।
এ ব্যপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, চাপরাশিরহাটে সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ পুলিশ বাজার পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় কারা অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছিল সেটি পুলিশ পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিক মুজাক্কিরের পরিবার এখন পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মুজাক্কিরের বড়ভাই নুর উদ্দিন জানান, আজ মঙ্গলবার তারা মামলা করবেন,
কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভায় সোমবার ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তারা মামলা করতে থানায় যেতে পারেননি।
তবে এই মৃত্যুর জন্য তারা কাউকে দোষারোপ করছেন না। মামলার বাদি হবেন তার বাবা নোয়াব আলী মাস্টার বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের দ্বন্দ্বে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরকে নিয়ে দুপক্ষই রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক আছে।
তিনি আরো বলেন, আব্দুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল উভয়ই নিহত মুজাক্কিরকে নিজেদের অনুসারী দাবি করছে তবে যতদ্রুত সম্ভব তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্দেশ দিয়েছেন নিহত সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের ঘটনা নিয়ে কেউ যাতে রাজনীতি করতে না পারে। সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের বড় ভগ্নিপতি হাওলাদার পুকুর পাড় মসজিদের খতিব মাওলানা আবু সাইয়েদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ওবায়দুল কাদের মুজাক্কিরের মৃত্যৃতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকবে।