লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন ভারত নিয়ন্ত্রিত ‘তিনবিঘা করিডোর’ পেরিয়ে দহগ্রাম ইউনিয়নের গরু পারাপার বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে আইন সঙ্গত কথা বলা নিয়ে বিজিবি কর্তৃক লাঞ্ছিত ও বিজিবি সোর্সম্যান কর্তৃক সাংবাদিক শামসুদ্দোহাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ইতোমধ্যে এসম্পর্কিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (০৯ জুলাই) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে করিডোর গেইটের পাশেই এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। নিয়মিত শনিবার ও বুধবার বিজিবি চেকপোস্ট দিয়ে আইন অনুযায়ী ৩০ টি গরু পারাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত প্রসঙ্গে তথ্য সংগ্রহের কাজে বিজিবির সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে উপস্থিত ৫১-বিজিবি, পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার দৈনিক জাগরণের পাটগ্রাম প্রতিনিধি সাংবাদিক দোহাকে ধমক দেন। এসময় যার গরু তার ছবি, নাম ও ব্যাক্তিকে উপস্থিত রেখে গরুগুলো ইস্যু করে করিডোর পার করার বিষয়ে অনুরোধ করলে বিজিবি উল্টো চটে গিয়ে এবিষয়ে কথা বলতে দহগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে দেখিয়ে দেন। এক পর্যায় বিজিবি প্রকাশ্যে অসংখ্য মানুষের সামনে সাংবাদিক দোহাকে ও সাংবাদিক পেশাকে জড়িয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। ‘আপনারা দেখার কে, বালের সাংবাদিক আপনারা’ ইত্যাদি নোংরা ভাষায় একাধিকবার জোরে জোরে আওয়াজ তুলে পরিস্থিতি বেসামাল করে তোলে পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার আমান, দহগ্রাম ক্যাম্প কমান্ডার এনামুল, সহিদসহ আরও অনেকে। সাংবাদিক দোহার সাথে নোংরা ও উস্কানিমূলক আচরণের সুযোগে চোরাকারবারির মুল হোতা, বিজিবির সোর্সম্যান/লাইনম্যান নামে পরিচিত ময়নুল ইসলাম ওরফে বাঘা ময়নুল, সোর্সম্যান সুজন, ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলী, সুমনসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন বিজিবির উপস্থিতিতেই অতর্কিত হামলা করার নির্দেশ দেন বলে ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায়। এসময় বাঘা ময়নুল চেকপোস্ট থেকে কোদাল হাতে নিয়ে হত্যার জন্য চোট মারলে সাংবাদিক দোহাকে সরিয়ে নেন পাশে থাকা অন্যান্য সহযোগী গণমাধ্যমকর্মী ও লোকজন। শুধুমাত্র চেকপোস্টে দায়িত্বরত এক বিজিবি নওজোয়ান বাঘাকে আটকানোর কিছুটা চেষ্টা করলেও অন্যান্য বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা নিরব ভূমিকা পালন করেন। বাঘা ময়নুলের আচরণ এতটাই ক্ষীপ্র স্বভাবের ছিল যে তাকে কোনোভাবে আটকানো সম্ভব হয়নি। এক পর্যায় বিজিবির উপস্থিতিতে নিজেই ছুটে যান মারার জন্য। এদিকে পাশে থাকা সুজন ও সাহেব আলী পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে সবাইকে উস্কে দেবার পায়তারা করেন। সোর্সম্যান সুজন উচ্চস্বরে বলেন, আপনারাত পত্রিকার সাংবাদিক, ঢাকার বড় বড় চ্যানেলের এমডি ও সাংবাদিক আমার আছে। এদের মতো বালের সাংবাদিকদের মারলে কিছুই হবে না, কেউ কিছু বলবে না ইত্যাদি অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে তাদের সিন্ডিকেটের লোকজনদের ডাকতে থাকেন। তাদের ঔদ্ধত্য আচরণকে থামাতে তখনও বিজিবি কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো সংবাদকর্মীদের সাথে অশালীন আচরণ এবং আবারও ‘বালের সাংবাদিক’ বলে গালি দেওয়া অব্যাহত রাখে।
অনেক পরে দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং বিষয়টি দেখবেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের অবগত করেন।
পরে এবিষয়ে পাটগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে, মামলা রেকর্ড করে পাটগ্রাম থানা পুলিশ।
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, সাংবাদিককে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি তদন্ত চলছে। মামলার আসামিরা এখন পলাতক রয়েছে। তাদের আটকের প্রক্রিয়া চলমান।
এবিষয়ে রংপুর ব্যাটালিয়ন (৫১-বিজিবি)’র অধিনায়ক বলেন, পুরো ঘটনা জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী, সিসিটিভি ফুটেজ এবং উপস্থিত সাধারণদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে ঘটনার ভিভিও সংগ্রহপূর্বক সকল দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা। উল্লেখ্য, ঘটনার দিন অনেকের ধারণকৃত ভিডিও বিজিবি জোর করে মুছে দেয়। এসময় কোনো কোনো ভিডিও ধারণকারীকে বিজিবি ভিতরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে বলেও জানা যায়।
বাংলাদেশের আলোচিত একটি স্থানের নাম দহগ্রাম তিনবিঘা করিডোর। যেটি সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। ভারত নিয়ন্ত্রিত তিনবিঘা করিডোরের পরে দহগ্রাম ইউনিয়ন, যাকে বলা হয় আর এক টুকরো বাংলাদেশ। এই ইউনিয়নের মানুষ একসময় করিডোর দিয়ে ভারতের দেওয়া নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বাংলাদেশের মুল ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারতো না। মুজিব ইন্দিরা চুক্তির ফলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সরকারের আমলে ধাপে ধাপে ২৪ ঘন্টাই এখন যাওয়া আসা করতে পারে দহগ্রাম ইউনিয়নের জনসাধারণ। সীমান্ত ইউনিয়ন হওয়ায় এখান দিয়ে মাদক, চোরাচালান, এমনকি মানবপাচারের মত লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে থাকে। অবৈধভাবে ভারতীয় গরু নিয়মিতই আসে যার সাথে জড়িত এখানকার বেশকিছু মানুষ। আর এই গরু কান্ডে বিভিন্ন সময়ে এই ইউনিয়নের মানুষদের সাথে ঘটে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিশেষ করে গরুর স্লিপ বাণিজ্য হলো এখানকার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। যে স্লিপ বাণিজ্যে হয়রানির শিকার হন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, বঞ্চিত হন তাদের ন্যয্য অধিকার থেকে।
Leave a Reply