মফস্বল গণমাধ্যম কর্মীদের সাংবাদিক মনে করেন না তিনি।
নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল সদর হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার তথ্য দিতে অনীহা তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের। পছন্দের সাংবাদিক ছাড়া কথাও বলতে চান না। তথ্য চাইলে সাংবাদিকদের সাথে বাজে ব্যবহার ও অসদাচ্চরনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।জেলার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের সাংবাদিক মনে করেন না বলেও জানান তিনি।
গত ১১ অক্টোবর সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী সুমাইয়া বেগম ও তার স্বজনদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগের উঠে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানতে পরের দিন ১২ টার দিকে হাসপাতালে যান কয়েকজন সাংবাদিক। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ প্রেমানন্দ মন্ডলের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চান না এবং বের হয়ে যেতে বলেন। কেন তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চান না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।এ সময় তিনি সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন,নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতিরও সাংবাদিকতার উপর (জার্নালিজম) ডিগ্রী নেই। এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ইতোপূর্বে তিনি অনেক সাংবাদিকের সাথেই এমন ব্যবহার করেছেন বলেও জানা গেছে।
এ দিকে, নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী ও রোগীর স্বজনকে মারপিট করে পুলিশে দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে ১৩ অক্টোবর সদর হাসপাতাল হল রুমে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে, সংবাদ সংগ্রহকারি সাংবাদিকদের বিষেদাগার করেন। জেলার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের সাংবাদিকতার উপর (জার্নালিজম) ডিগ্রী নেই বলে সাংবাদিক মনে করেন না বলেও জানান তিনি। তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।এ সময় জিটিভির জেলা প্রতিনিধি মীর্জা মাহমুদ রন্টু,মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হাফিজুল করিম নিলু,এটিএন বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি জহির ঠাকুর,সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি খায়রুল আরেফিন রানাসহ উপস্থিত সাংবাদিকরা তত্ত্বাবধায়কের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি (তত্ত্বাবধায়ক)।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মোঃ আসাদ উজ-জামানের (টনি) কাছে সাংবাদিকরা হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার তথ্য জানতে চাইলে, সহকারী পরিচালক বলেন,এখন প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ছাড়া অন্য কোন কথা বলব না।
উল্লেখ্য, নড়াইল সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী সুমাইয়া বেগম ও তার স্বজনদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগের উঠে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়,গত ৮ অক্টোবর নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার নলদি ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের সুমাইয়া বেগম চিকিৎসা নিতে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্র্তি হন।আজ(১১ অক্টোবর) রোগীর অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগীর স্বামী ইমরান নার্সকে খুজতে থাকেন। খোজা-খুজির এক পর্যায়ে দেখেন কর্তব্যরত নার্স সদর হাসপাতালের নার্স এ্যাসোশিয়েশানের সভাপতি বিউটি পারভিন ফ্যান মেরামতের কাজে ব্যাস্ত রয়েছে। অনেক সময় ধরে নার্সকে আকুতি বিনতি করে রোগীর অবস্থা দেখার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন।বার বার অনুরোধ করার পর নার্স রেগে গিয়ে বলেন দেখছেন না আমি ফ্যান নিয়ে ব্যস্ত আছি, দেরি হবে। তখন রোগীর স্বামী নার্সকে আপনার কাজ রোগীর সেবা করা তা আপনি ফ্যানের কি বোঝেন।এ কথার বলার পর নার্স তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে রোগীর স্বামী ইমরানকে মারেন এবং হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মোঃ আছাদ উজ জামান মুন্সীকে খবর দেন।খবর পেয়ে ডাঃ মোঃ আছাদ উজ জামান মুন্সী, ডাক্তার সুব্রত কুমার বিশ্বাস সহ হাসপাতালের অন্যান্য নার্স, আউট সোর্সিং কর্মী, ওয়ার্ড বয় নিয়ে গাইনি ওয়ার্ডে উপস্থিত হন।সহকারি পরিচালকের নেতৃত্বে , হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আউট সোর্সের কর্মী, ওয়ার্ড বয় মিলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের বেধড়ক মারপিট করেন। মারপিটের এক পর্যায়ে রোগীর শাশুড়ি রিমা বেগমের কান ছিড়ে ফেলেন। বিষয়টি অন্য খাতে প্রবাহিত করতে সরকারি এ্যামবুলেন্স ব্যাবহার করে হাসপাতালের কর্তব্যরত সকল নার্স সদর থানায় গিয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।এ ঘটনায় পুলিশ রুগীর শাশুড়ি রিমা বেগমে আটক করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নার্স বলেন,সহকারী পরিচালক হিসেবে কোন পদ নড়াইল সদর হাসপাতালে নেই। তবুও ডাঃ মোঃ আছাদ উজ জামান মুন্সী ক্ষমতার বলে সহকারী পরিচালক পদে .চাকরী করে যাচ্ছেন। তিনি স্বজন প্রীতির মাধ্যমে গাইনি প্রশিক্ষন বিহীন নার্স বিউটি পারভিন কে এ বিভাগে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিউটি পারভিন সদর হাসপাতালের নার্স এ্যাসোশিয়েশানের সভাপতি।এ ছাড়া হাসপাতালের সহকারি পরিচালকের সাথে সখ্যতা থাকায় তিনি স্টাফ,রোগী সবার সাথে খারাপ আচরন করে আসছেন।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মোঃ আছাদ উজ জামান মুন্সীর বলেন, রোগীরা আমাদের মারধর করে আমরা তাদের কিছুই বলিনি। তাহলে কাল ছিঁড়ল কি করে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেনি। তত্বাবধায়ক ডাঃ প্রেমান্দ মন্ডল এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।