সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
দৈনিক সিলেটের হালচাল পত্রিকার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক রুহুল আমীন তালুকদারকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য ধর্ষণ মামলা সহ একাধিক মামলার আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদ ও তার সকল অপকর্মে সহচর শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার চার্জ গঠন (শোনানী) আগামী ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
গত ১৯ মে সিলেটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদ মেম্বার ও শরীফ উদ্দিন হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিচারক কাওছার আহমেদ আসামীদের পূর্বশর্তে জামিন মঞ্জুর করেন এবং অভিযোগ গঠন (শোনানী)’র জন্য আগামী ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নূর মিয়া উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের দিগলবাক গ্রামের মৃত সাজ্জাদ আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান এরশাদ মেম্বার ও তার চাচা, মৃত আব্দুল মক্তসিনের ছেলে শরীফ উদ্দিন এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্যানাল কোর্ড ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি আইনের ৩২৩/ ৩০৭/ ৫০৬ ধারা মতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-৪, বিয়ানীবাজার, সিলেটে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতে বিচারক প্রতিবেদন গ্রহণ করে গত ৩০ মার্চ বিচারের জন্য মামলাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে প্রেরণ করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক সিলেটের হালচাল পত্রিকার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক ও দৈনিক সিলেটের দিনকাল পত্রিকার সাবেক স্টাফ রিপোর্টার, বর্তমানে দৈনিক সোনালী সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রথম আজহা অনলাইন পত্রিকার সিলেটের ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক রুহুল আমীন তালুকদার এর উপর বিগত ২৮/০৭/২০২১ইং তারিখ বুধবার বিকাল ৪ টায় সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের ঢেউনগর-দিগলবাক গোপাটের রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে আসামীগণ প্রাণ নাশের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
হামলার শিকার সাংবাদিক রুহুল আমীন ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাদী হয়ে তাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত আক্রমণ সহ প্রাণনাশের হুমকীর অপরাধ এনে জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং ৪ বিয়ানীবাজার সিলেটে একটি মামলা দায়ের করেন। যা বিয়ানীবাজার সিআর মামলা নং ১৫৯/২১ ইং বাংলাদেশ প্যানাল কোর্ড ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি আইনের ৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/ ৫০৬ (২)/৩৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওসি বিয়ানীবাজার সিলেটকে ঘটনার বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলা সূত্রে আরো জানা গেছে, আসামীগণ অত্যান্ত উগ্র, দাঙ্গাবাজা, ভূমিখেকো, দলবদ্ধ সন্ত্রাসী ও মাস্তান প্রকৃতির লোক। তারা ধনে, জনে, বলে বলিয়ান ও প্রভাবশালী এবং পাশাপাশি ১নং আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদ ইউপি সদস্য হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার সহ আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না। মামলার প্রধান আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার নারী ও শিশু ৫১৬/১৯ইং, জিআর ৫৬/২২ইং, জিআর ০৯/১৯ইং, জি.আর ৬৮/১৮ইং নং মামলা সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে সে একাধিকবার জেল হাজতবাস ভোগ করেছে। তার স্বভাব-চরিত্র ভাল নয়। সে অত্যন্ত জঘন্য ও ভয়ংকর প্রকৃতির লোক।
গত ৪ ও ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং সালে মামলার প্রধান আসামী এরশাদ সহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের অপকর্মের আংশিক চিত্র দৈনিক সিলেটের দিনকাল পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করেন। যার শীর্ষক শিরোনাম “বিয়ানীবাজারে ভূমিদস্যু এরশাদ বাহিনীর বিপক্ষে আদালতের রায়।” এই সংবাদ প্রচার করায় মামলার বাদী সাংবাদিক রুহুল আমীন তালুকদারের সাথে আসামীগণে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই আক্রোশে গত ২৮ জুলাই গ্রাম্য লোকজনের চলাচলের রাস্তার সীমানা অতিক্রম করে বাদীর অসহায় দুর্বল শাশুড়ী পাতারুন নেছার বসত বাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে ইটসলিং এর কাজ করতে থাকে। বাড়ির মালিক পাতারুন নেছা নিষেধ করলে আসামীগণ তা কর্ণপাত করেনি। বাধ্য হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক নূরকে মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয় জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি দেখে সমাধান করে দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুর উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ পেয়ে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে আসার পথে স্থানীয় শেলিয়া বাজারে বাদী সাংবাদিক রুহুল আমীন তালুকদারকে দেখতে পেয়ে তাকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান জহুর উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা মামলার আসামীগণ বাদীকে দেখামাত্র উত্তেজিত হয়ে তাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা ও আঘাত-আক্রমণ করে। শুধু তাই নয়, আসামীগণ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বাদীকে হুমকী দিয়ে যায়, “আজ প্রাণে বেঁচে গেলেও পরে সুযোগ-সুবিধা মত স্থানে পেলে প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করে তাদের নামে সংবাদ প্রচার করার স্বাদ চিরতরে মিটিয়ে দিবে।