মো. নাঈম ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে করোনা আক্রান্ত মাকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ছেলে। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এ দৃশ্য নজর কাড়ে সবার। এমন সময় কোনো এক পথচারী দৃশ্যটি মুঠোফোনে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়। দ্রুতই সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়। পরে জানা যায়, মুমূর্ষু মাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে মোটরসাইকেলে এভাবেই ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন জিয়াউল হাসান নামের ওই যুবক।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া হিরন পয়েন্টে এ দৃশ্য দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিয়াউলের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকায়। তাঁর মা নলছিটি বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহেনা পারভীন (৫০) দশ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার নমুনাও দেন। কিন্তু প্রতিবেদন পাননি। এর মধ্যেই গতকাল সকালে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। কষ্ট কমাতে একটি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে আনেন তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে জিয়াউল হাসান। লাগানো হয় সেটি। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে রেহেনা পারভীনের। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না জিয়াউল।
এরপর মাকে বরিশালের হাসপাতালে আনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্য যানের খোঁজে নামেন। কিন্তু পাচ্ছিলেন না। নিরুপায় হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে মাকে হাসপাতালে আনার সিদ্ধান্ত নিলেন। শরীরে সঙ্গে শক্ত করে বাঁধলেন অক্সিজেন সিলিন্ডারটি। এরপর মাকে পেছনে বসিয়ে তাঁর মুখে পরানো হলো অক্সিজেন মাস্ক। এভাবে ১৮ কিলোমিটার পথ পার হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় মাকে নিয়ে পৌঁছান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মোটরসাইকেল চালক তারই ছেলে কৃষি ব্যাংক ঝালকাঠি সদর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটু। শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মা রেহানাকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দ্রুতগতিতে হাসপাতালে ছুটছেন টিটু। সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন টিটুর দুই স্বজন।
জিয়াউল হাসান টিটু জানালেন আমার মা রেহেনা পারভীনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে মাঝেমধ্যে অক্সিজেন লেভেল ওঠানামা করছে। ‘শনিবার মা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অক্সিজেন লেভেল ৯৪-৯৩ নেমে যাচ্ছে। দুপুরে দেখলাম মায়ের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে। সে জন্য ভাবলাম ঝুঁকিটা নেওয়া ঠিক হবে না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট তৌহিদ টুটুল বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীকে ধরে রোগী বসে ছিলেন। যিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তিনি হেলমেট পরা ছিলেন। তার চেহারা আমরা দেখতে পারিনি বা দেখার চেষ্টাও করিনি। তাদের থামিয়ে হয়তো পরিচয় শনাক্ত করতে পারতাম, কিন্তু সেটি হতো অমানবিকতা। অক্সিজেন পরিহিত যে নারী ছিলেন তার বয়স দেখে মনে হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহীর মা হতে পারেন। পরে জানলাম তারা মা-ছেলে।
তৌহিদ টুটুল আরও বলেন, রোগী বহনকারী মোটরসাইকেলটির পাশে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল। সেটিতে তাদের দুই স্বজন ছিল। মূলত রোগী যেন পড়ে না যান সেজন্য তারা পাশাপাশি চালিয়ে আসছিলেন। আমরা চেকপোস্ট অতিক্রম করিয়ে দিলে গাড়ি দুটো দ্রুত বরিশাল শহরের দিকে চলে যায়।
টিটুর বড়ভাই পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মিঠুর বন্ধু কেএম সবুজ জানান, গত বুধবার রেহানা পারভীনের করোনা পজিটিভের রিপোর্ট আসার পর বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শনিবার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দুপুর আড়াইটায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে টিটু তার মাকে ভর্তি করে। এখন সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।