রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ জেলার লালমনিরহাট সদর থানার ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, জড়িত আসামী গ্রেফতার, হত্যা কাজে ব্যবহৃত দা, কাঠের লাঠি, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সেন্ডেলসহ সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার এবং বিজ্ঞ আদালতে আসামীদের স্বীকারোক্তী প্রদান করার মত চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
লালমনিরহাট সদর থানা ওসি শাহ আলম জানান, মামলানং-৭৩,তারিখ-২৪/০৬/২০২১ ধারা ৩০২ /২০১/৩৪ পেনাল কোড মতে অভিযুক্ত আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর থানার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডস্থ রতিপুর বসুনিয়া পাড়ায় জনৈক মমিনুল ইসলাম(৩৫), পিতা-মৃত মোফাজ্জল হোসেন মোফা এর পাট ক্ষেতে জেলেখা ওরফে জেলে (২৪) নামের একজন নারীর লাশ পড়নের বোরকাদ্বারা মুখমন্ডল পেচানো এবং কপালে ধারালো অস্ত্রের আঘাত অবস্থায় এলাকার লোকজন ২৪/০৬/২০২১ তারিখ বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকায় দেখতে পায়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় যে,ওই নারীকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে অপরাধীরা ফেলে যায়।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ উপস্থিত হয় এবং লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করে।
হত্যাকান্ডের শিকার জেলেখা ওরফে জেলের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তকালে জেলেখা ওরফে জেলের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের সিডিআর পর্যালোচনা করতঃ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী শ্রী বিধান চন্দ্র বর্মন(২৬), পিতা-শ্রী দীনেশ চন্দ্র বর্মন, সাং-রতিপুর মন্ডল পাড়া ও শ্রী সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতাল (২১), পিতা-শ্রী সুদর্শন বর্মন, সাং-তিস্তা পাঙ্গাটারী, থানা ও জেলা লালমনিরহাট আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন আসামীদ্বয়।
জেলেখা প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হলে কুড়িগ্রাম জেলার মনজু নামক ব্যক্তির সাথে গত ১৩/০৫/২০২১ তারিখে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পর জেলেখা জানতে পারেন যে, সে তার দ্বিতীয় স্বামীর ৬ষ্ঠতম স্ত্রী। সে কারণে দ্বিতীয় স্বামীর সহিত সংসার করা হতে বিরত থাকতে অত্র থানাধীন তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মোবাইল ফোনে আসামী বিধান চন্দ্র রায়ের সহিত জেলেখার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলে। উক্ত আসামী বিধান চন্দ্র ও জেলেখার বাড়ি একই ইউনিয়নে পাশাপাশি গ্রামে। সেই সূত্রে বিধান এর স্ত্রী বাড়ীতে না থাকার সুযোগে ২১/০৬/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় জেলেখা তার বাড়ীতে আসে এবং রাত্রী যাপন করে ভোরে চলে যায়। পরের দিন ২২/০৬/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় সবার অজান্তে আবারো জেলেখা আসামী বিধানের বাড়ীতে আসলে তাহাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয় এবং জেলেখা ঐ রাতে বিধানের শয়ন ঘরে অবস্থান করে। ঐদিন দিবাগত ভোর অর্থাৎ ২৩/০৬/২০২১ তারিখ ভোর অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় জেলেখা আসামী বিধানকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং তাহাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে যাবে কিনা জানতে চায়। আসামী বিধান পূর্বের ন্যায় তাহাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে জেলেখা আশপাশের লোকজনদেরকে ডাকাডাকি করার চেষ্টা করলে সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় আসামী বিধান তার ঘরে থাকা কাঠের ফলা (লাঠি) দিয়ে জেলেখার মাথার পিছন দিকে আঘাত করে। সে মাটিতে পড়ে গেলে আসামী বিধান তার ঘরে থাকা দাঁ এর ধারালো মাথা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার কপালে কোপ মারে এবং দাঁ এর ধারালোর বিপরীত পাশ দিয়ে গলায় চেপে ধরে জেলেখাকে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তাহার লাশ খাটের নিচে রেখে সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় কাঠমিস্ত্রির কাজে বেরিয়ে যায়। কাজ শেষে তার কর্মচারী গ্রেফতারকৃত ২নং আসামী শ্রী সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতাল (২১)কে নিয়ে তার বাড়ীতে আসে এবং ২নং আসামীর সহযোগীতায় গ্রেফতারকৃত ১নং ও ২নং আসামী মিলে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ২৩/০৬/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ১১.৩০ ঘটিকায় পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে জেলেখার লাশ ফেলে রাখে তারা।