রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির তথা অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে বিবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রংপুরের পুষ্প বাংলাদেশ নামক এনজিও-র বিরুদ্ধে।
সে কারণে ২রা ফেব্রুয়ারী, বুধবার দুপুরে পাটগ্রাম -বুড়িমারী বাইপাস মোড় সড়ক অবরোধ করেন ভাতা বঞ্চিতরা। এতে নেতৃত্ব দেন যুবমহিলা লীগ নেত্রী তানিয়া মীর্জা। এরপর পুলিশ তাদেরকে ইউএনও সাইফুর রহমানের কাছে নিয়ে গেলে তদন্ত সাপেক্ষ সমূদয় টাকা দেয়া হবে জানালে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, অনিয়ম করে প্রশিক্ষণ তালিকায় নাম নিবন্ধন, নিম্নমানের খাবার প্রদান, নির্ধারিত দিনের চেয়ে কম প্রশিক্ষণ দেওয়া ও প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা প্রদানে হয়রানি ছাড়াও নানা অনিয়ম করে পুষ্প বাংলাদেশ। এ সব কারণে গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত প্রায় ৭ ঘন্টা পাটগ্রাম পৌরসভার কোটতলী এলাকায় অবস্থিত বাস্তবায়নকারী বেসরকারী সংস্থা পুষ্প বাংলাদেশের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন ভুক্তভোগীরা।
সরকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করে। দেশের ৮ জেলা লালমনিরহাট, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ, বরগুনা ও শেরপুর জেলায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরিতে পশু পালন, কম্পিউটার, সেলাই, বিউটিফিকেশন ও রান্নাবান্নাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ৬০০ জনকে বাছাই করে পাটগ্রাম উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর।
পাটগ্রাম উপজেলায় গত ২০২০ সালের জুন মাসে প্রশিক্ষণ শুরু হলেও করোনার প্রভাবে সংশোধন করে শেষ হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে।
মীর পিপুল ও দিব্যনাথ রায় অভিযোগ করে বলেন, প্রশিক্ষণের শুরু থেকে অনিয়ম করে প্রশিক্ষণ দিতে থাকে পুষ্প বাংলাদেশ পাটগ্রাম প্রকল্প কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের দলে ২০ জনকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ দল (ব্যাচ) গুলোতে ১০/১২ জনকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাকীদের নাম মনগড়া মত লিখে দেয় পুষ্প বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। পূর্বে করা তালিকার বাইরে ২/৩ হাজার করে টাকা নিয়ে প্রশিক্ষণে নাম তালিকাভুক্ত করে পুষ্প বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। প্রত্যহ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীকে সরকার প্রদেয় খাবারের বিল ২ শ ৫০ টাকা করে হলেও ১ শ ২০ টাকায় স্থানীয় রেস্তরা থেকে নিম্নমানের খাবার প্রদান করা হয়। করোনার কারণে ৩৮ দিন করে প্রশিক্ষণ প্রদানের নিয়ম হলেও পুষ্প বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রথমার্ধে ২-৩ টি দলকে নির্ধারিত দিনের প্রশিক্ষণ দেয়। পরবর্তীতে ২৫, ১৮, ১০, ৭, ও ৫ থেকে ৩ দিন করে অবশিষ্ট দল গুলোকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। উপস্থিতি তালিকা ও অন্যান্য নিবন্ধন খাতায় ৩৮ দিনেরই স্বাক্ষর, খাবার ও যাতায়াতের বিল করে তাঁরা। এতে প্রায় লাখ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেন। অপরদিকে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার টাকা দিতে দিনের পর দিন হয়রানী করতে থাকে বেসরকারি বাস্তবায়নকারী সংস্থা পুষ্প বাংলাদেশ।
গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) টাকা প্রদান করা হবে বলে মোবাইল ফোনে জানায় পুষ্প বাংলাদেশ পাটগ্রাম প্রকল্প কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। টাকা দেওয়ার দিন সরকার প্রদেয় এককালীন ৫ হাজার ও যাতায়াত বিলের ৯ হাজার ৫ শ টাকাসহ মোট ১৪ হাজার ৫ শ টাকার বিপরীতে টাকা কম করে ৭ হাজার ৫ শ টাকা দিতে থাকে পুষ্প বাংলাদেশ পাটগ্রাম প্রকল্প কার্যালয়ের হিসাব সহকারী। এ ঘটনায় প্রশিক্ষণার্থীরা টাকা কম নিতে অস্বীকার করে উপস্থিত সংস্থার কর্মকর্তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে কার্যালয়ের মূল ফটক লাগিয়ে দিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পুষ্প বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের ৩ জনকে অবরুদ্ধ করে রাখে ভুক্তভোগীরা। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল, পাটগ্রাম পৌরসভার মেয়র রাশেদুল ইসলাম সুইট, পাটগ্রাম থানা পুলিশ, কাউন্সিলর আজিজুল হক দুলাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভুক্তভোগী ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। পুষ্প বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আগামী ৩ তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শন পূর্বক সরকার নির্দেশিত নিয়মে সুরাহা করার আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা চলে যায়।
পুষ্প বাংলাদেশ পাটগ্রাম প্রকল্প কার্যালয়ের সহকারি বেলাল হোসেন, ‘অবরুদ্ধ থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকারি নিয়মে যা টাকা পেয়েছি সেটাই দিতেছিলাম কিন্তু প্রশিক্ষণার্থীরা টাকা বেশি চায়। বরাদ্দ না পেলে কোথা থেকে দিব?
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ‘খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুল আলম ও বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা পুষ্প বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক নিশাত নাহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।