এইচ এম বাবুল, জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নুরপুর রহমানিয়া দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. রিয়াজুল হক এর বিরুদ্ধে ২টি পদে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সুপার মাওলানা মো. রিয়াজুল হক নুরপুর দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করার পর নানা দূর্নীতি অনিয়ম করে আসছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের সাথে অসদাচারণ করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীদের সাথেও দূর্ব্যবহার করেন।
নুরপুর মাদ্রসার সাবেক সভাপতি মু. আ রাজ্জাক বেঁচে থাকার সময় গোপনে রাতের আধারে বৈঠকের মাধ্যমে আয়া ও নিরাপত্তারক্ষী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে ১ জুন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় দুটি পদের জন্য লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
আবেদনে ১৫ দিনের মধ্যে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষকের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নুর নাহার খাতুনের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ও কাঠালবাড়ি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে হানিফ নামের এক প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
গত ১৫ জুনে সাবেক সভাপতি মু. আ রাজ্জাক মারা যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের পৃথক ভাবে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের একজন অভিভাবক সদস্যকে নীতিমালা বর্হিভুত ভাবে সভাপতি নিযুক্ত করেন।
সভাপতির শ্যালক সাইফুল ইসলাম অভিভাবক সদস্য হলেও তার ছেলে রাকিব হোসেন রৌমারীর মুক্তাঞ্চল নামের প্রাইভেট স্কুলের নিয়মিত ছাত্র। তবুও তিনি কিভাবে সদস্য হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরবর্তিতে বর্তমান সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সুপারের যোগসাজসে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যদের কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পর্যায়ক্রমে হাটে বাজারে ডেকে নিয়ে রেজুলেশনের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। এই স্বাক্ষর দিয়ে একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের জন্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে কৌশলে রেজুলেশন করে দুটি পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করেন।
সময় অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে না থাকায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সুপার উভয় ওই কর্মকর্তার নিজ বাসভবন গাইবান্ধায় যান। সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় কাগজে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে ঢাকায় মাদ্রাসা বোর্ডে যান বলেও জানা যায়।
পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি গোপন রাখায় অত্র এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাছাড়াও সুপার মাদ্রাসার পুকুরের বালু, লিচু বাগান নিলাম, মাদ্রাসার জমির ধান ও কয়েকটি গাছ বিক্রির প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন কমিটির সদস্যরা।
এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক সদস্য আফতারুল জানান, আয়া ও নিরাপত্তাকর্মী পদে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধ্য ভাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ওই নিয়োগ বাতিলের দাবী করছি।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফজলুল হক বলেন, সুপার একজন দূর্নীতিবাজ তিনি মাদ্রাসার অর্থের কোন হিসেব দেন না এবং মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে অবৈধ্য ভাবে দুটি পদে নিয়োগ দিচ্ছেন।
সুপার মাওলানা মো. রিয়াজুল হকের সঙ্গে মুঠো ফোনে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। সাক্ষাতে কথা হবে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম নকিবুল হাসান কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।