মোঃ আশরাফুল ইসলাম, খুলনা সদর প্রতিনিধিঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ হাফেজ মাওঃ আব্দুল আউয়াল বলেন, চাল, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের উধ্বর্গতির ফলে জনজীবন চরম দুবির্ষহ হয়ে উঠছে। পেঁয়াজের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। তরিতরকারি, ডাল মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বি মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন নাভিশ্বাস উঠেছে। আজ শুক্রবার ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগর ও জেলার বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
যশোরে রাসুল সা. কে নিয়ে কটুক্তি কারীর শাস্তি, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধ, সিলেটে পুলিশী হেফাজতে রায়হান হত্যার বিচার ও ধর্ষণের সর্বোচ্চ রায় মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি এবং কেন্দ্রীয় কর্মসুচীর অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলার উদ্দোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরানের সভাপতিত্বে ও নগর সেক্রেটারী শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, জেলা সেক্রেটারী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য, নগর সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা মুফতী আমানুল্লাহ ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাঃ মাওঃ ওয়েজকুরুনী।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, বর্তমানে আওয়ামী সরকার বিগত ১ যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ধর্ষণ আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকারের নজিরবিহীন দূর্বৃত্তায়নের রাজনীতি, অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের আধিপত্যবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ধারাবাহিক অধ্যায়। এভাবে ভোটবিহীন অবৈধ সরকার দেশের মধ্যে এক এক ক্ষমতা দানব সৃষ্টি করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনগণকে ভোগান্তি ফেলেছে। আর এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সরকার দলীয় লোকজন। ফলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। ‘অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ জীবনের তাগিদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে’। তিনি সিলেটে পুলিশী হেফাজতে রায়হান হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
প্রধান বক্তা মুফতী আমানুল্লাহ বলেন, আজ আইনের শাসন না থাকার কারনে হযরত মুহাম্মদ সা. কে নিয়েও কটুক্তি করার সাহস পায়, তিনি অবিলম্বে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিঠুনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। যার ক্ষমতা আছে সে এক ধরনের বিচারহীনতার সুবিধা ভোগ করে সেই সুবিধা তাকে নানা অপকর্মে প্ররোচিত করে। এর মধ্যে ধর্ষণ একটি। এর জন্য বর্তমান অবক্ষয়গ্রস্ত দলীয় রাজনীতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। ক্ষমতার সুবিধা নিতে দলে দুর্বৃত্ত-অপরাধীরা নেতৃত্বের আসন পর্যন্ত বাগিয়ে নেয়। যখনই কারো অপরাধের খবর ফাঁস হয়ে হয়ে যায়, তখন বলা হয়, সে আসলে আমাদের দলের কেউ নয় অথবা অনুপ্রবেশকারী। এটা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব। যে রাজনীতি মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, মানুষের পাশে থাকবে— তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন দুর্বৃত্ত হয়ে উঠছে, খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করছে। আসলে পুরো রাজনীতিই বর্তমানে দুর্বৃত্তকবলিত হয়ে পড়েছে। অপরাধীদের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। যেকারণে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, খুন, রাহাজানির অভিযোগে তারা গ্রেফতার হন, ধর্ষণের ঘটনায় আসামি হন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাওঃ ইমরান বলেন, বিদ্যমান ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে আইন পাশ করে যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব নয়। অতএব আগে রাষ্ট্রযন্ত্র শুদ্ধিকরণের অভিযানে নামতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের সচেতন শিক্ষার্থী ও জনগণকে জাগতে হবে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ-আসুন! যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ সহ সকল অনাচার থেকে এদেশের আপামর জনসাধারণকে মুক্তি দিতে মানব রচিত তাগুতী আইন পরিহার করে চির শান্তির পথ ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেখ জামিল আহমেদ মুফতী আলী আহমদ, মুফতী ইমরান হোসাইন, মাওলানা আসাদুল্লাহ আল গালিব, মাওলানা মুজিবুর রহমান, ডাঃ নাসির উদ্দীন মাওলানা হারুনুর রশিদ, এস কে নাজমুল হাসান, মোঃ শরিফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সাত্তার হালদার, মাওলানা মুফতি আশরাফুল ইসলাম, প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।