মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির রাজাপুরে সুদ মুক্ত মুনাফার লাভের কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে আল-হেমায়েত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন এর বিরুদ্ধে। দেখা মিলছেনা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও। প্রধান কাযার্লয়ে ঝুলছে তালা।
অভিযুক্ত মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের চর-পালট গ্রামের আঃ সোমেদ মাষ্টারের ছেলে। গালুয়া ইউনিয়নের নিজ গালুয়া গ্রামের জয়ন উদ্দিন মাস্টারের মেয়ের ঘরের নাতী। তিনি নানা বাড়িতে থাকেন এবং এখানে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করেছেন। এবং তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বায়িত্বে রয়েছেন। তিনি অল্পের ভিতরেই বেশ কিছু গ্রাহককে মোটা অংক মুনাফা (লাভ) দিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস ও আকৃষ্ট করে তোলে। বিভিন্ন সময় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সুদ মুক্ত মুনাফার অধিক লাভ দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিছে বলে জানান এ এলাকার ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন, মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও মাওলানা হেলাল উদ্দিন নামের তিনজনে মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে যার রেজিঃ নং- ০১২/ঝাল। এই প্রতিষ্ঠানির প্রধান পৃষ্টপোষক আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী (পীর সাহেব কারীমপুর) ঝালকাঠি-১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী, চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মুফতী হেদায়েত উল্লাহ আনসারী, সাধারণ সম্পাদক মুফতী সৈয়দ তাজুল ইসলাম , মাওলানা হেলাল উদ্দীন ওয়াজ মাহফিল সহ বিভিন্ন স্থানে বসে বয়ান পেস করতেন যে, “ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে সেটা সুদ হয়” আর আলেম ওলামাদের প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখলে সেটা সুদ হয়না এবং এটাই ইসলামের আইন। ইসলাম ধর্মকে পূজিঁ করে এমন কথা বলে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সহজ সরল মানুষদেরকে ভুল বুঝিয়ে তাদের জীবনের অর্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগীরা এসব টাকা ফেরত পেতে চাপ দিলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পালিয়ে যান ওই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন।
জি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী আলেয়া বেগম নামের এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার স্বামী নাই দুই মেয়ে আমি ১৯৯৪ সালে চাকরি লইছি ১৯৯৫ সালে বিল হইছে জীবনে যত আয় করছি তেমন খরচ করি নাই জমাইছি ব্যাংকে টাকা রাখি নাই ভয়ে যদি কিছু হয়। এলকার হুজুর রফিক মাওলানা আমাকে সুদ মুক্ত অধিক মুনফার কথা বলে ভুল বুঝিয়ে তার করা ‘আল-হেমায়েত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’ নামের প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখতে বলেন। একদিন সকালে আমার টাকা চাইতে গেছি তখন কয় ‘বুড়ি তোমার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবো’ আমি কই এই হুজুর একি বলো আমার টাকা দিবা কবে কও আমার টাকা আমাকে ফেরত দেও। পরে আমি স্কুলে চলে গেছি। তিনি আমার কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছেন। একজন মাওলানা হয়ে কীভাবে এমন করতে পারলেন! এই প্রতারককে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
আরেক ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, আমার
দুই লাখ টাকা রাখা আছে। আমার ছোট ভাইর রাখা আছে ৩ লাখ টাকা। এবং তিনি প্রতি মাসে ৫হাজার করে রাখেন তাতেও তার এক বছর এগারো মাস হইছে রাখে। এছাড়াও ভান্ডারিয়ার এক ব্যক্তির থেকে আমি জামিনদার হয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকনকে তিন লাখ টাকা এনে দিয়েছিয়ে। কয়দিন আগে টাকা চাইতে গেলে জানায়, কিছু দিন পরে টাকা দিয়ে দিবে। এখন দেখি গত ২৮ সেপ্টেম্বর সে পালিয়ে গেছে। এখন আমি কী করবো?
ভুক্তভোগী মো. কামাল হোসেন বলেন, আমার নিজের দুই লাখ টাকা রাখা আছে। এছারা আমার মাধ্যমে দুই জনের সাড়ে তিন লাখ টাকা রাখা আছে। টাকা না দিয়ে সে পালিয়ে গেছে। এখন আমি যাদের টাকা এনে এখানে রাখছি তারা টাকার জন্য আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে। কী করবো বুঝতে পারছি না। হুজুর হয়ে এরকরম প্রতারণা করবে জানা ছিল না। এই প্রতারকের কঠিন বিচার চাই।
এ ছাড়াও সিরাজুল ইসলাম, মো. হানিফ, মহিউদ্দিন খান, আলতাফ, হেলেনা সহ একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কারীমপুরের পীর সাহেব আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী এলাকার ওয়াজ মাহফিল সহ বিভিন্ন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখতে পরামর্শ দেন। তার উপর ভক্তি শ্রদ্ধা করে এলাকার অনেকেই এ প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখেন। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের জন্য রাখা শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নি:স্ব হতে চলছেন কয়েক’শত গ্রাহক।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতী হেদায়েত উল্লাহ আনছারী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নামে মাত্র ভাইস চেয়ারম্যান, টাকা পয়সার লেনদেন ও জমি জমা ক্রয় সহ সকল বিষয় মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন একাই পরিচলনা করতেন। আমার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানে যে গ্রাহকরা টাকা জমা রেখেছেন আমি তাদের সাথে বিষয়টি সমাধান করে নিবো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা জামান মুঠোফোনে বলেন, একজন মাওলানা হয়ে এলাকার মানুষকে অধিক মুনাফার লাভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে তা ভাবতে পারছি না। তবে মাওলানা রফিকুল ইসলাম আকন এর সাথে নুরুল হুদা ফয়েজী ও তার ছেলে হেদায়েতুল ফয়েজী এবং মাওলানা আব্দুস সত্তর ওরফে সাহ সাহেব হুজুর এই তিন জন জরিত আছে। এরাই তাকে পালাতে সহযোগিতা করছে। রফিকুল ইসলামের ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটা জমি ছিলো যার মূল প্রায় দুই কোটি টাকা সেই জমি ৭০ লাখ টাকা দাম ধরে নুরুল হুদা ফয়েজী তার নিজের নামে দলিল করে নিছে এবং বরিশালে একটা জমি ছিলো সেটা আব্দুস সত্তর হুজুরের নামে দলিল করে নিছে। কিন্তু তারা দুজনের কেউ তাকে টাকা দিয়ে দলিল করে নায় যার জন্য তিনি এই সমস্যা পরেছে বলে জানতে পাই। এমন প্রতারক মাওলানাকে গ্রেপ্তার করে ভুক্তভোগী মানুষগুলোর টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এমনটাই দাবি জানাচ্ছি।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় বলেন, বিষয়টি শুনেছি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।