মোঃ নাঈম হাসান ঈমন ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আংগারিয়া গ্রামের ৬ নং ওয়ার্ডের মৃত দলুখানের ছেলে শতবর্ষী আয়নালী ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে দুটি ছেলে সন্তান হারিয়ে নিজেসহ দুই নাতি ও এক পুত্রবধুর মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে প্রায় পচিশ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আয়নালী বলেন, তার বর্তমান বয়স প্রায় একশ’ বছরের কাছাকাছি। এবয়সে ভিক্ষার ঝুলি বহন করতে আর পারছিনা। তার বসতভিটায় ৬/৭ শতাংশ জমি ছাড়া চাষ যোগ্য কোন জমিজমা নেই। তিনি প্রথম বয়সে দিন মজুরের কাজ করতেন। এই এলাকায় খাল-নদী বেশী ছিলো এবং মানুষের একমাত্র বাহন ছিলো টাপুড়ে নৌকা। তাই তিনি কষ্টের কাজ না করতে পেরে একটি টাপুরে নৌকা তৈরী করেন, যার মাঝখানে ছাউনি ছিলো। সেই নৌকায় মালামাল ও লোকজন নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতেন। টাপুরে নৌকার মাঝিগিরী করে আয়নালীর কেটেছে বিশটি বছর। কালের বিবর্তনে পলি পড়ে এই এলাকার খাল-নদী বিলিনের পথে যাওয়ার সাথে সাথে মাঝিদের নৌকার পেশাটিও হারিয়ে গেছে। পরে সে পেটব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে বৈঠা ছেড়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়েছেন। বেছে নিলেন বিক্ষার পথ। প্রায় ২৫ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন আয়নালী। তার স্ত্রী শাহাবানু প্যারলাইজ্ড হয়ে ৭ বছর বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে ২০০৮ সালে মারা যান। রেখে যান বজলু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রফিক নামে দুই ছেলে সন্তান। বড় ছেলে বজলু ঢাকায় নির্মানাধীন ভবনের সেন্টারিং এর কাঠ মিস্ত্রী ছিলেন। কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পেরে বজলুর অসুস্থ অবস্থায় তার একমাত্র ছেলে মাহাবুবকে নিয়ে স্ত্রী নারগিছ বেগম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। ছোট ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রফিক রাজাপুর বাজারে মুঠে’র কাজ করতো। ২০১০ সালে রফিক বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। বেল্লাল নামে এক ছেলে রেখে যান তিনি। বেল্লালকেসহ রফিকের স্ত্রী রহিমনকে অসুস্থ্য বড় ছেলে বজলুর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বজলু রহিমার ঘরে ছেলে বায়জিদ জন্ম নেয় এবং ২০১৬ সালে বজলু মারা যায়। আয়নালীর পূত্রবধূ রহিমন জানান, বায়জিদ ও আয়নালীকে দেখাশুনা করার জন্য সে অন্য কোথাও চলে যায়নি। শশুর আয়নালী’র ভিক্ষায় কষ্টে সংসার চলছে। বর্তমানে বেল্লাল (১৩) ৭ম শ্রেণীতে ও বায়জিদ (৭) তৃতীয় শ্রেণীতে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। ঘুরে দেখা গেছে টিন-কাঠ দিয়ে তৈরী ছোট ঘরটির চালার ভিবিন্নস্থানে ছিদ্র হয়ে গেছে। স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গির খানের মাধ্যমে শশুর আয়নালীর বয়স্ক ভাতার কার্ড ও আমার নিজের বিধবা ভাতার কার্ড করিয়েছি। দুটি কার্ডের অর্থ ও শতবর্ষী বৃদ্ধ শশুরের ভিক্ষের অর্থ দিয়ে কোনরকম সংসার চলছে।
রাজাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা বলেন, আয়নালীকে বয়স্ক ভাতা ও তার পুত্রবধু রহিমনকে বিধবা ভাতার কার্ড, ১০ টাকা মৃল্যের চালের রেশন কার্ড এবং করোনা কালিন সময় ত্রান ও নগদ অর্থ দেয়া হলেও আয়নালীর ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে তাদের পরিবারের চারজনের স্থায়ী খাবারের ব্যাবস্থা করার মতো পরিষদের সক্ষমতা নেই। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল জানান, তারা চাইলে সহজ শর্তে ২০/৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। ইউএনও মোঃ মোক্তার হোসেন জানান, ভিক্ষুকদের সহায়তার ফান্ড আছে। সেখান থেকে অফেরত যোগ্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেয়া যেতে পারে, যা দিয়ে নিজে কিছু অর্থ যোগ করে ব্যবসা করতে পারেন। ধনাঢ্য ব্যক্তি ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা সাহায্য করতে পারেন আয়নালীর পুত্রবধু রহিমা বেগমের বিকাশ নম্বারে-০১৭৮২৭০২৫১৬।