মোঃ নাঈম হাসান ঈমন ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধিঃ ‘ঘর পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন রাজাপুরের সেই রহিমা বেগম। অসুস্থ্য স্বামী নিয়ে কোনো সময় কন কনে শীতে তীব্র ঠান্ডা বাতাশে, কোনো সময় বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে থাকতে হতো গৃহহীন স্বামীর ভিটায়। স্বামীর ঘরের ভিটা মাটি ছাড়া আর কোন আয়ের উৎসো নেই তাদের। ওই ভিটায় ছিলো ভাঙ্গা টিনের পলিথিনের চালা ও ভাঙ্গা বেড়ার ছোট এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরে অতি কষ্টে বসবাস করে আসছিলো অসুস্থ্য মন্নাফ ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম’। সরেজমিনে ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠি গ্রামের ২নং ওয়ার্ডে গেলে রহিমা বেগম জানান, সাথি নামে তার একটি মেয়ে ছিলো, তাকে বিবাহ দেয়া হয়েছে। জামাই গাড়ির হেলপার। আসলাম (১৯) নামে তার একটি ছেলে ছিলো। ২০ বছর আগে সাগরে মাছধরতে গিয়ে আজো ফিরে আসেনি। তার স্বামী মন্নাফ (৮০) কাঠ মিস্ত্রী কাজ করে সংসার চালাতেন। স্বামী দশ বছর আগে কাজ করতে গিয়ে ঘরের মাচান থেকে পড়ে অসুস্থ্য হয়ে যায়। অর্থাভাবে ভালো ডাক্তার না দেখাতে পারায় সেই থেকে আস্তে আস্তে প্যারালাইজে পরিনত হয়ে যায়। পঞ্চাশউর্ধো রহিমা চলতে কষ্ট হলেও বেঁচে থাকার লড়াই করে আসছেন। অসুস্থ্য স্বামীর ন্যুনতম ঔষধ কিনতে ও তার মুখে দু’মুঠো আহার তুলে দিতে এবং নিজে বেঁচে থাকতে অন্যের ঘরে জিএর কাজ, কখনো মাটি কাটার কাজসহ যখন যে কাজ পান তাই করেন। অর্ধাহার অনাহারে থাকলেও ছিলো না মাথা গোঁজার ঠাই। একটি ঘর পাওয়ার আশায় এলাকার মেম্বর, চেয়ারম্যানসহ অনেকের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ঘর নাই, খাবার নাই বিষয়টি প্রকাশিত হলে সামান্য খাদ্য নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হোসেন নিজেই হাজির হন রহিমার বড়িতে। তিনি ওই পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন। আশ্বাস দেন প্রধান মন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘর দেয়ার। গত ২৩ জানুয়ারী উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের চারাখালি গ্রামের ১নং ওয়ার্ডে সরকারের নির্মিত ঘরের ১১নং ঘরের চাবিটি রহিমার হাতে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হেসেন। ঘরের চাবিটি হাতে পেয়ে আনন্দে-আবেগে কেঁদেফেলেন রহিমা। উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রাজাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রধান মন্ত্রীর দেয়া সরকারি জমিতে নির্মিত মোট ৩শ’ ৩০টি ঘর এলাকার গৃহহীনদের মাঝে বিতরন করা হবে। তার অংশ হিসাবে চারাখালি গ্রামে প্রথম বারের মত ৩১টি জমিসহ ঘর ও তার দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। একটি ঘরে দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর ও একটি লেট্রিন রয়েছে। একটি ঘর নির্মানে বরাদ্ধ ১লাখ ৭১ হাজার টাকা।