মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
রাজাপুরে খালে বিষ দিয়ে মাছ নিধন চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলার জাঙ্গালিয়া, ধানসিঁড়ি, জাঙ্গালিয়ার শাখা নদী ও পোনা নদীতে বিষ দিয়ে দেশী প্রজাতির মাছ নিধন করেছে একটি চক্র। এতে উপজেলার চর রাজাপুর, বাগড়ি, রাজাপুর বাজার, চর ইন্দ্রপাশা, ইন্দ্রপাশা, সাউথপুর, তুলাতলা, আঙ্গারিয়া, সত্য নগর এলাকার অন্তত ১০ কিলো মিটার জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ ভেসে উঠেছে।
নদী তীরের রাজু, হিমেল, সুমন ও মাসুম বলেন, শুক্রবার সকালে নদী ও শাখা খালগুলো তীরে গেলে বিষয়টি নজরে আসে। চিংড়িসহ বিভিন্ন দেশী প্রজাতির মাছ নদীর তীরে ভেসে আসতে শুরু করে এবং এলাকার মানুষ জড়ো হয়ে তা ধরেছে। এভাবে মাছ নিধন করার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাইবারমাথিং রোটেনন প্রয়োগে উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খালের পোনাসহ দেশীয় মাছ নিধন অব্যাহত থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। প্রশাসন নীরব ভূমিকায় থাকায় বিলুপ্ত প্রায় মৎস্য সম্পদ রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চরমভাবে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র।
সূত্র বলছে, গত মাসে উপজেলার শুক্তাগড় গ্রামে পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ নিধন করা হয়। এরপর উপজেলার চারাখালি গ্রামে খালে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করা হয়। এ ছাড়া বাগড়ির ধানসিঁড়ি, তুলাতলার জাঙ্গালিয়া ও গাজিরহাট, সাতুরিয়া, লেবুবুনিয়া, বাঁশতলা, উত্তমপুরসহ বিভিন্ন শাখা খালে প্রায়ই বিষ দেওয়া হয়। একদল লোক ট্রলার ও নৌকায় এসে বিষ প্রয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে মাছ নিধন ও মাছ শিকারে মেতে উঠেছে।
গত ৮ জুলাই শুক্তাগড় গ্রামে পুকুরে বিষ দিয়ে দেড় লক্ষাধিক মাছের পোনা নিধন করা হয়। এতে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং এলাকায় মাছের পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরের মালিক বেলায়েত হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত জানান, ১৫ শতাংশ জমির পুকুরে তারা মাছের পোনা ছাড়েন। কিন্তু বিষ দিয়ে মাছের পোনা নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগেও কয়েক বার ভান্ডারিয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত রাজাপুরের চাড়াখালি, জাঙ্গালিয়া, বিষখালী নদীর পূর্ব ছিটকি, দেউরী খালেও বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করা হয়েছে। বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগে গলদা চিংড়িসহ দেশীয় মাছ নিধন করা হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, খাল বা নদীতে বিষ ফেলে কারা মাছ নিধন করছে তা জানা মুশকিল। কিন্তু এতে শুধু মাছ নয় জীববৈচিত্র ধ্বংসও হচ্ছে। বিভিন্ন সময় কয়েকজনকে আটক করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা জড়িতদের হাতেনাতে ধরে মৎস্য অফিসকে অবহিত করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সচেতন ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।