নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গণিত) শক্তিপদ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের সহকারি অধ্যাপক তন্দ্রা রায়ের বিরুদ্ধে ভূয়া খামারি ও উদ্যোক্তা সেজে নড়াইল কৃষি ব্যাংকের নড়াইল শাখা থেকে ২০ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি চাকুরিজীবিদের ব্যবস্যা বাণিজ্য করার সুযোগ না থাকলেও কোন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে অস্তিত্বহীন ভূয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠান ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্ম ” ও ‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” দেখিয়ে ৪ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা ও ৫ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা মোট ২০ লাখ টাকার লোন নিয়েছেন শক্তিপদ বিশ্বাস দম্পতি। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছেন শক্তিপদ বিশ্বাস পিসিতো ভাই (ফুফাতো ভাই) নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সহকারী মহাব্যবস্থাপক) প্রতাপ কুমার বিশ্বাস।
নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের দূনীতি,অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়য়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদর উপজেলার রায়খালী গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেন আলম নামের এক ভুক্তভোগী।
অভিযোগে জানা যায়, সরকারি চাকুরিজীবি নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গণিত) শক্তিপদ ও তার স্ত্রী বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের সহকারি অধ্যাপক তন্দ্রা রায়কে খামারি ও উদ্যোক্তা সাজিয়ে অস্তিত্বহীন ভূয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠান ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্ম ” ও ‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” দেখিয়ে ৪ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা ও ৫ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা মোট ২০ লাখ টাকার লোন নিয়েছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছেন শক্তিপদ বিশ্বাস পিসিতো ভাই (ফুফাতো ভাই) নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাস।
নড়াইল সদর কৃষি ব্যাংক শাখা সূত্রে জানা যায়, আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় শুধু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নামে বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশের ৪ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা এবং বাকি ৫ শতাংশ সরকার থেকে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক ভর্তুকি হিসেবে পাবে। অথচ দূনীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাস আপন মামাতো ভাই শক্তিপদ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী তন্দ্রা রায়কে অস্তিত্বহীন ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্র্মের” সত্ত্বাধিকারী সাজিয়ে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা দেখিয়ে গত ৩০ মে ২০২৩ তারিখে ৪ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছেন। যার ঋণ হিসাব নং ২২০১-০১৩৪০০১৬৯৮। এছাড়া চলতি বছরের ১৩ মার্চ ‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নারী উদ্যোক্তা তন্দ্রা রায়ের নামে ৫ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরন করা হয়।
‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্র্মের” ঠিকানা সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রায়খালী গ্রামে শক্তিপদ বিশ্বাসের পৈতৃক নিবাসে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোন গবাদি পশুর খামার নেই। এ ঋণের মঞ্জুরিপত্রের ৯ নম্বর শর্ত মোতাবেক ঋণের টাকা দিয়ে দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ও খামার পরিচালনার কাজে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু ঋণ গ্রহীতাগণের তো কোন খামারই নেই। অতীতেও ছিল না।
এ সময় শক্তিপদ বিশ্বাসের পিতা সদানন্দ বিশ্বাস বলেন, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিধ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ২০ বছর আগে অবসরে গিয়ে বৃন্দাবনসহ তীর্থস্থান ঘুরে এসেছেন তার পরিবারে কেউ কখনও গরুর খামার করেননি। ছেলে শক্তিপদ বিশ্বাস সরকারি চাকুরি করেন ও তার স্ত্রী তন্দ্রা রায় কলেজের শিক্ষক তারা নড়াইল শহরে বসবাস করেন। শক্তিপদ বিশ্বাসের কাকী রিতা বিশ্বাস বলেন, আমি এ বাড়িতে এসেছি প্রায় ৩০ বছর আগে এ বাড়ির সবাই চাকুরি করে এরা কখনও গরু পালন করেননি।
শক্তিপদ বিশ্বাসের প্রতিবেশী বাবুরাম পাল,তপন কুমার বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর মোল্যাসহ প্রতিবেশীরা জানান, আমাদের এ পাড়ায় এখন পর্যন্ত কোন গরুর খামার গড়ে উঠেনি। আমাদের কারোর কারোর বাড়িতে একটি দুটি গাভী আছে। প্রকৃতপক্ষে,এই ঠিকানায় ঋণ গ্রহীতার বৃদ্ধা বাবা-মা বসবাস করেন।
‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” এর ঠিকানা নড়াইল ফেরীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ফাঁকা ঘরের সামনে ‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” নামে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। যেখানে উদ্যোক্তা হিসেবে শক্তিপদ বিশ্বাসের পিতা সদানন্দ বিশ্বাস ও শক্তিপদ বিশ্বাসের ভাই গৌতম বিশ্বাসের নাম রয়েছে। অথচ ভূয়া প্রতিষ্ঠান ‘‘বিশ্বাস ফামিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়াররিং” এর নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তন্দ্রা রায়ের নামে গত ১৩ মার্চ ৫ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তন্দ্রা রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর খামার করার ইচ্ছা ছিল করা হয়নি, দোকান দিয়েছিলাম সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। তাহলে ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে তার (তন্দ্রা রায়) স্বামী ভালো বলতে পারবেন।
শক্তিপদ বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে তার শহরের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি তার কর্মস্থল নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায়নি। শক্তিপদ বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে ০১৭১২ ০১৩১৫১ নম্বরে বার বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগে আরো জানা যায়, করোনার প্রভাবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করেন। প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের অনৈতিক দাবি পূরণ না হওয়ায় ঋণ প্রদানে নানা ধরণের টাল-বাহানা করে ফেরত দেন। এভাবে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঘোষিত ঋণের অর্থ পাননি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
প্রতাপ কুমার বিশ্বাস কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদানের পর থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাঁর আর্থিক ক্ষমতায় নামমাত্র প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্রে কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণসহ তার নানান নেতিবাচক কর্মকান্ডে অতিষ্ট উপকারভোগীরা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীও তার হুমকি-ধামকিতে অতিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, কথায় কথায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালমন্দ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে চাকরিচ্যুতও করেছেন তিনি। পছন্দের লোককে ঋণ না দিলে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মীকে মানসিক নির্যাতন করেন। এমনকি মাঠকর্মীদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাখায় বদলি করে আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখায় গিয়ে ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে তিনি স্বজনপ্রীতি ও দূনীতি বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।