রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীকে বাঁচাতে একটি কিডনি দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল স্ত্রী রুমা বেগম (৩০)। স্বামীর প্রতি তার এমন বিরল ভালোবাসা এলাকাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
রুমা বেগম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী এলাকার নুর হোসেনের (৩৫) স্ত্রী।
জানা গেছে, দুইটি কিডনি অচল অবস্থায় দীর্ঘ চার বছর ধরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছেন নুর হোসেন। সর্বশেষ চিকিৎসকের পরামর্শে বহু জায়গায় কিডনির খোঁজ করে নুর হোসেনের পরিবার। কিডনি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁরা। এ অবস্থায় নিজেই কিডনি দিতে রাজি হন স্ত্রী রুমা বেগম (৩০)। কিডনি ম্যাচ হওয়ায় গত রোববার বিকেল ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে দুজনেরই অপারেশন করা হয়। অপারেশন করে স্বামীর অচল একটি কিডনি ফেলে দিয়ে স্ত্রীর দেওয়া একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে তাঁরা দুজনেই ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে নুর হোসেনের সঙ্গে প্রায় ১৪ বছর আগে একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উফারমারা মাছির বাজার এলাকার সহিদার রহমানের মেয়ে রুমা বেগমের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ১০ বছর পর স্বামী নুর হোসেনের কিডনি রোগ ধরা পড়ে। রংপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় মাস ডায়ালাইসিস করিয়েছেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ মাস আগে নুর হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসক দেখানো হয়। সেখানে ডাক্তার বিভিন্ন রকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানান, তাঁর দুটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে পরিবারটি হতাশ হয়ে পড়ে। নুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর রুমা বেগমের কিডনি মিলে যাওয়ায় স্বামীকে বাঁচাতে গৃহবধূ রুমা বেগম নিজের একটি কিডনি দিতে রাজি হন।
গৃহবধু রুমা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, আমি নিজ ইচ্ছায় আমার স্বামীকে কিডনী দিয়েছি। আমি মনে করি বাঁচলে দুজনে বাঁচব আর মরলে দুজনে মরব।স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে খুবই খুশি। আল্লাহ যেন আমাদের সুস্থ রাখেন।
রুমা বেগমের মা আমিনা বেগম বলেন, জামাইকে বাঁচাতে আমাদের মেয়ে রুমা বেগমকে কিডনি দিতে উৎসাহ দিই। স্বামীর বিপদে রুমার মতো প্রত্যেক স্ত্রীর স্বামীর পাশে থাকা উচিত।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর ইসলাম বলেন,ঘটনাটি শুনে অবাক হয়েছি। এটি একটি বিরল ঘটনা। স্ত্রীর কিডনি দিয়ে স্বামীর প্রাণ বাঁচানোয় এলাকায় ওই গৃহবধূর প্রশংসা করছেন সবাই।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আবু নেওয়াজ মোঃ নিশাত ঘটনার সত্যাতা নিশ্চিত করেন বলেন, ঢাকার একটি হাসপাতালে কিডনী প্রতিস্থাপনের পর স্বামী ও স্ত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।