বিশ্বনাথ থেকে আব্দুল কাইয়ুমঃ
সবজির দামে দিশেহারা ক্রেতা। ছোট বড় সব হাট বাজারে একি চিত্র। গ্রামের বাজারগুলোতে দাম আরো বেশি। প্রতি কেজিতে ১০- ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হয়ে থাকে গ্রামের বাজারে। অথচ তরিতরকারির এখন ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর এত দাম বেশি কেন এর কোন সু-উত্তর নেই অনেকের কাছে। এতে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল ও ভোগ্যপুন্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। দুই একদিন দায়সারাভাবে বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করে কর্তারা থাকেন ক্লান্ত। মফস্বল এলাকায় তদারকি ও কোন প্রকার অভিযান পরিচালনা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর গলা কাটছেন ক্রেতা ও ভোক্তার। ভোগ্যপুন্যের পাশাপাশি সবজি বাজার তদারকি করার দাবী স্থানীয় ক্রেতাদের।
একাধিক ক্রেতার অভিযোগ বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছে মত দাম নিচ্ছেন। এমন অভিযোগ মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্যমতে স্থানীয় ভাবে উৎপাদন কমে গেছে এবং আমদানি নির্ভরতার কারণে সবজির দাম কমছে না। কিন্তু সচিত্র চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। গেল বছরের তুলনায় এবছর স্থানীয় ভাবে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে জানিয়েছে কৃষি অফিস। অর্থ বছরে উপজেলায় সকল প্রকারের রবিশস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭১৭ হেক্টর। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেই এবং পরিবেশ আবাদ উপযোগী রয়েছে।
উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে লামাকাজি, খাজাঞ্চি, অলংকারি ও রামপশা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয়ে থাকে। সরজমিন ঘুরে দেখাও গেছে চাষীদের বাগানে সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলন রয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন আলু, সীম, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বাজারে বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ মৌসুমে চাষীদের লোকসানে পড়ার শংকা তেমন নেই। ভরা মৌসুমে সবজি অধিক দামে বিক্রি হওয়ায় চাষীদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে খাজাঞ্চির চাষী মনির আলী জানান, সারের দাম ও উৎপাদন খরচ বেশি, কাজের লোকবলের সংকট থাকায় কৃষকেরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। এছাড়া বৃষ্টি না থাকায় সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানির যোগানে অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় করে সবজি উৎপাদন করতে হচ্ছে। একি বক্তব্য অলংকারি ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার ও রামপাশা ইউনিয়নের দবির মিয়ার।
সবজির হালহকিকত নিয়ে বিশ্বনাথের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে নতুন আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি পিচ ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০, বেগুন ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সীম ৫০ টাকা, বাধা কপি পিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০, গাজর ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও করলা ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য শাকসবজি ও অধিক দামে বিক্রির দৃশ্য দেখা গেছে।
উপজেলার লামাকাজি, রামপাশা, বৈরাগী বাজার, রাজাগঞ্জ, সবজির আড়ং খ্যাত মুফতি বাজার, সিংগেরকাছ, বিশ্বনাথ সদর, হাবড়া বাজার, পনাউল্লা বাজার, পীরবাজার সহ সকল বাজারে এমন চিত্র বিরাজ করছে।
শীতের শেষের দিকে এসে সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরবে কি না তা এখন বলা না গেলেও সাধারণ মানুষের দুর্দশা কাটবেনা তা বলাই যায়।