লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে হলে আগে নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না, কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে। কারণ তাদের অনেকের কাছে নেই স্মার্টফোন। এই কারণে অনেকে টিকা নিতে পারছেন না। ফলে অনেকে করোনাক্রান্ত হচ্ছেন।
তবে তাদের এই ভোগান্তি দূর করতে প্রশংসনীয় এক উদ্যোগ নিয়েছে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান । চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধানের সেচ্ছাসেবী সদস্যরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি তারা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে পরামর্শও দিচ্ছেন।
৬ আগষ্ট, শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে দহগ্রাম ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান। ৩ টি ওয়ার্ডে ০৩ টি গ্রুপে ভাগ হয়ে মোট ১২ জন সেচ্ছাসেবী কাজ করবেন এবং সেচ্ছাসেবীদের মনিটরের জন্য আরো তিন জন মনিটর নিয়োগ করেছেন চেয়ারম্যান।
শুরুতে নতুন হাট, পশ্চিমবাড়ি,বঙ্গেরবাড়ি, নয়াবাড়ি, নতুনপাড়া, থানা পাড়া,ডাঙ্গারবাড়ি সহ ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে মোট আটটি গ্রামের প্রায় ৬০০ মানুষের টিকার নিবন্ধন করবেন তারা । এদিকে ঘরে বসে সহজে টিকার নিবন্ধন করতে পারায় এলাকার লোকজন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
এলাকাবাসী ও সেচ্ছাসেবী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এ মাস থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রথম ধাপে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে আগামি ৭ই আগষ্ট । এক্ষেত্রে আগে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না, কীভাবে নিবন্ধন করতে হয়। এই অবস্থায় গ্রামের মানুষের ভোগান্তি দূর করতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেচ্ছাসেবী নিয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন চেয়ারম্যান ।
আজ শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে গ্রামের মানুষের বাড়িতে গিয়ে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে তারা বিনামূল্যে টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছেন। এতে তাদের এই কার্যক্রমে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, মাছিরউদ্দন ও ফরিদুল ইসলাম ।আজকের মধ্যে ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের ৬০০ মানুষের নিবন্ধন করবেন তারা।
নতুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহিমুদ্দিন (৬৫) বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিতে হলে আগে রেজিস্ট্রেশন করা লাগে। কিন্তু কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তা আমরা জানতাম না। চেয়ারম্যান এর সেচ্ছাসেবী সদস্যরা আমাদের বাড়িতে এসে করোনা টিকার দেওয়ার জন্য ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছেন। এখন আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারব। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ কামাল হোসেন প্রধান চেয়ারম্যান কে।
একই এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ছক্কি (৩৫) বলেন, লকডাউনের মধ্যে সেচ্ছাসেবী সদস্যরা আমাদের বাড়িতে এসে ফ্রি নিবন্ধন করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুশি।
এ বিষয়ে সেচ্ছাসেবী সদস্য আসাদ, এইচ শেখ( ফ্রিল্যান্সার) বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। অনেক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা থেকে সুরক্ষা থাকতে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। আর ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়েও করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভ্যাকসিন নিতে হলে আগে নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ কীভাবে নিবন্ধন করতে হয় তা জানে না। এছাড়া লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। যার কারণে তারা নিবন্ধনও করতে পারছে না। এই কারণে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। এসব কথা দহগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আমরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে নিবন্ধন করে তা প্রিন্ট করে দিচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে আমাদের সহায়তা করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান।
দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান বলেন, এ মাস থেকে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়েও করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সব দিক চিন্তা করে শুরুতে ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের জন্য দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। করোনা টিকা নিতে হলে আগে নিবন্ধন করতে হয়। তবে কীভাবে নিবন্ধন করতে হয়, তা গ্রামের অনেক মানুষ জানে না। এজন্য অনেকে টিকা নিতে পারছেন না। আমার সেচ্ছাসেবী সদস্যরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে দিবে। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে টিকার নিবন্ধের পর প্রিন্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে নিবন্ধন বুথ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে
পর্যায়ক্রমে দহগ্রামের পুরো ইউনিয়ন আমার এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।