বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ৪নং শেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার, একাধিক মামলার আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদের সহযোগিতায় এক তরুণীকে অপহরণ করে দু’দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার শিকার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের ধর্ষিত তরুণী বাদী হয়ে গত ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা একজন সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযুক্ত আসামীরা হলো- উপজেলার ৪নং শেওলা ইউনিয়নের দিগলবাগ গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন কুটই’র ছেলে ধর্ষক জবলু আহমদ (২৪), ধর্ষকের চাচতো ভাই, মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে, ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মাহমুদুল হাসান এরশাদ ও অজ্ঞাতনামা একজন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, অপহরণকারী ও ধর্ষক জবলু আহমদ একজন অটোরিক্সা (সিএনজি) ড্রাইভার। তার অটোরিক্সা যোগে ধর্ষিতা তরুণী তার নানার বাড়ি উপজেলার চারাবই গ্রামে যাতায়াত করতো। এই সুবাদে অটোরিক্সা ড্রাইভারের সাথে তরুণীর আন্তরিকতার এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গত ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় ড্রাইবার জবলু সহ অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি উপজেলার কচকটখাঁ গ্রামে তরুণীর বাড়ি পাশে গিয়া জবলুর সাথে দেখার করার জন্য সংবাদ পাঠিয়ে তারা একটি অটোরিক্সা নিয়ে তরুণীর বাড়ির পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে। গ্রাম্য সরলমনা তরুণী জবলুর সংবাদ পেয়ে দেখা করতে গেলে জবলু তার মুখ চেপে ধরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সহযোগিতায় জোরপূর্বক তাদের সাথে থাকা অটোরিক্সায় তুলে গোলাপগঞ্জ উপজেলার জবলুর এক আত্মীয় জনৈকা নাজমিন এর বাড়িতে নিয়ে যায়।
নাজমিনের বাড়িতে আটকিয়ে রেখে ৮ এপ্রিল তারিখ দিবাগত রাতে ধর্ষক জবলু একাধিক বার জোরপূর্বক তরুণীকে ধর্ষণ করে এবং পরের দিন সকালে তরুণীকে রেখে জবলু চলে যায়।
১০ এপ্রিল রাতে ধর্ষক জবলু তার চাচতো ভাই মেম্বার মাহমুদুল হাসান এরশাদকে সাথে নিয়ে নাজমিনের বাড়িতে আসে। এ সময় এরশাদ ধর্ষিতা তরুণীকে চরম ভাবে শাসায় এবং তার চাচাতো ভাই ধর্ষক জবলুর বিরুদ্ধে থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। অন্যথায় ধর্ষিতা তরুণী সহ পরিবারের সদস্যদের প্রাণে হত্যার হুমকী দেয়।
পরে মেম্বার এরশাদ, ধর্ষক জবলু ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিসহ নাজমিনের বাড়ি থেকে ধর্ষিতা তরুণীকে একটি অটোরিক্সা যোগে নিয়ে আসে এবং ধর্ষিতা তরুণীকে তার বাড়ি সামনের রাস্তায় রেখে চলে যায়।
ধর্ষিতা তরুণী বাড়িতে গিয়ে তাকে অপহরণ করে ধর্ষণের বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানাইলে তারা গত ১২ এপ্রিল ধর্ষিতাকে নিয়ে বিয়ানীবাজার থানায় গিয়ে ধর্ষিতা তরুণী তাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকী উল্লেখ করে ধর্ষক জবলু আহমদ (২৪), ধর্ষকের চাচতো ভাই, ইউপি মেম্বার মাহমুদুল হাসান এরশাদ ও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামী করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
বিয়ানীবাজার থানা অফিসার ইনচার্জ হিল্লোল রায় নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষিতা তরুণীর অভিযোগ থানা প্রাপ্ত হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনি/০৩) এর ৭/৯ (১)/ ৩০ তৎসহ বাংলাদেশ প্যানাল কোড এর ৫০৬ ধারা মতে এজাহার গণ্যে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। যাহা থানার মামলা নং- ৮, তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২২ ইংরেজি।
অভিযোগকারী ধর্ষিতা তরুণীকে পরীক্ষার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)তে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, ইউপি মেম্বার মাহমুদুল হাসান এরশাদ অত্যান্ত উগ্র, দাঙ্গাবাজ, ভূমিখেকো, নারীলিপ্সু প্রকৃতির লোক। সে এলাকার একজন প্রভাবশালী লোক হওয়ায় আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু মামলা নং- ৫১৬/১৯ইং, বিয়ানীবাজার জিআর-৬৮/১৮ইং, জিআর-৯/১৯ইং, সিআর-১৫৯/২১ইংরেজি এবং নারী কেলেংকারী মামলা সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক বার কারাভোগও করেছে এরশাদ মেম্বার। তার স্বাভাব চরিত্র ভাল নয়, সে অত্যান্ত জঘন্য ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। তৃণমূল পর্যায়ের এমন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে জনসাধারণ সেবার পরিবর্তে ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তাই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সুধীজন।