আব্দুল কাইয়ুম, বিশ্বনাথ থেকে:
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলার ২ নং খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের জামাল আহমদ।
২২ আগস্ট ২৩ ইং তারিখে মোট ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এই মামলায়। সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ এনে তেঘরী গ্রামের মৃত মখন মিয়ার ছেলে জামাল আহমদ বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ১। মোঃ নুনু মিয়া (৫৫), পিতা-মৃত আরফান মিয়া, সাং-কাশিমপুর, বিশ্বনাথ, সিলেট, ২। দবির মিয়া (৩৫), পিতা- সজিদ মিয়া, ৩। সফুল বিবি (৫৫) স্বামী-মৃত সজিদ মিয়া, উভয় সাং- মিজানেরগাঁও, থানা- বিশ্বনাথ, জেলা-সিলেট ৪। সুহেল সিকদার (৪০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং- অজ্ঞাত ।মামলার নং বিশ্বনাথ সি. আর, ৩১৬/২৩ ইং।
মামলার অভিযোগে বাদি জামাল আহমদ উল্লেখ করেছেন অভিযুক্তরা তার কাছ থেকে ৪(চার)লক্ষ টাকা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।এজাহার সুত্রে উল্লেখ রযেছে, অভিযুক্ত চারজন আসামী লোভী ও প্রতারক চক্রের সদস্য। অভিযুক্ত ২নং আসামী স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ১নং আসামী নুনু মিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে তাহাকে পূর্ব হইতে চিনি। এক পর্যায়ে সে আমাকে জানায় যে, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার মাধ্যমে বাথরুম সহ ডিপ টিউবওয়েল, কালভার্ড ওয়াশব্লকের কাজ আসিয়াছে আমি যদি তার সাথে যোগাযোগ করি তাহলে সে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রজেক্ট পাশ করিয়ে দিতে পারে।
আমি তার বক্তব্যে বিশ্বাস করিয়া উল্লেখিত সাক্ষীগন সহ আরো অন্যান্য মানুষের সাথে আলোচনা করি। আমিসহ ১ ও ৩ নং সাক্ষীগণ এ ব্যাপারে পুরাপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ১নং আসামীর অফিসে গেলে তিনিও আমাকে জানান যে, বাথরুম সহ ডিপ টিউবওয়েল নিতে চাহিলে টাকা লাগবে প্রতি টিউবয়েল প্রতি ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা করে। এবং যতটি চাইবে ততটি নিতে পারিবে। আমরা তাহার কথা বিশ্বাস করিয়া তাহার পিএস ২নং আসামী দবির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে ২নং আসামীর কথা অনুযায়ী আমার এবং অন্যান্য লোকদের একটি তালিকা করে ওয়াসব্লকের জন্য ১১টি পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ১টি পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, তেঘরী জামে মসজিদের জন্য আমি নিজে ১০ হাজার টাকা ও ৪ টি পরিবারে কাছ থেকে কালভাটের জন্য ৩০ হাজার টাকা মিলিয়ে সর্ব মোট ৩,৯০,০০০ (তিনলক্ষ নব্বই) হাজার টাকা উঠাই। ২ নং আসামীর প্রদত্ব ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দান কারী ৪ নং আসামী সুহেল সিকদার নামে এক ব্যক্তি ওয়াসব্লকের জায়গা পরিদর্শনে আসলে দবির মিয়ার কথা অনুয়ায়ী ৮(আট) হাজার টাকা দেই এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ১ নং আসামী নুনু মিয়ার নিকট ১লক্ষ টাকা, ২ নং আসামী দবির মিয়ার নিকট ১,৪০,০০০(একলক্ষ চল্লিশ) হাজার টাকা, ৩ নং আসামী সফুল বিবির নিকট ১,৪২,০০০(একলক্ষ বিয়াল্লিশ) হাজার টাকা একুনে সর্বমোট ৩,৯০,০০০(তিনলক্ষ নব্বই) হাজার টাকা বিভিন্ন সময়ে ২ নং আসামীর কথা অনুয়ায়ী ১-২-৩ নং আসামীর নিকট প্রদান করি।পরবর্তীতে দবির মিয়া ০১৭২০৪৬২৫১০ নামে একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলে যে ওই বিকাশ নাম্বারে ১০ হাজার টাকা দিতে। ওই বিকাশ একাউন্টের মালিক তার কাছে টাকা পায়, আমি ২ নং আসামী দবির মিয়ার কথা মোতাবেক উল্লেখিত বিকাশ নাম্বারে ১০ হাজার টাকা দেই।
সর্বমোট ৪ লক্ষ টাকা ২ নং আসামী দবির মিয়া আমাকে প্রজেক্ট দিবে বলিয়া তার সঙ্গীয় ১ ও ৩ নং আসামী সহ সম্পূর্ণ টাকা উল্লেখিত মতে গ্রহন করে।
পরবর্তীতে বারবার দবির মিয়া সহ ১ ও ৩ নং আসামীর নিকট ধর্ণা দিয়ে প্রায় ১ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। প্রজেক্টের কাজ হচ্ছেনা দেখে আসামীগণকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিলে আসামী গণ দিমু দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করে তালবাহানা করতে থাকে।
আমি দরখাস্থকারী বাদী উপায়ন্তর না পেয়ে ১ নং আসামী উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার নিকট গিয়া টাকা চাহিলে ২ নং আসামী দবির মিয়া টাকা ফেরত দেবেন বলে ২৯/৬/২০২৩ ইং তারিখে উনার বাড়িতে যেতে বললে উল্লেখিত স্বাক্ষীগণ কে নিয়ে আমি ২নং আসামী দবির মিয়ার বাড়িতে যাই।বাড়িতে গিয়ে ২ নং আসামী দবির মিয়ার খোঁজ করলে তার মা ৩ নং আসামী সফুল বিবি ঘর থেকে বের হয়ে এসে একটি খাম ধরিয়ে দেন এবং বলেন এতে চেক আছে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিও। আমি স্বাক্ষীগণ সম্মুখে খামটি খুলে দেখতে পাই ১০/০৯/২০২৩ ইং তারিখ, নিচে ৩,৮০,০০০(তিনলক্ষ আশি) হাজার টাকার পরিমান চেকে বসানো এবং কথায় লেখা অংশে অভার রাইটিং করা এবং প্রাপকের জায়গা সাদা ( খালি)। সাথে সাথে আমি স্বাক্ষীগণ সম্মুখে ৩ নং আসামী সফুল বিবিকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি নিরব থাকেন। সাথে সাথে ২নং আসামী দবির মিয়াকে ফোন দিয়ে ওভার রাইটিং ও টাকার পরিমান জানালে তিনি জানান যে, এখন এটি নিয়ে যাও, কাল আসিও, আমি নতুন চেক দেবো। আমি সাক্ষীগণসহ পরবর্তী বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করিলে ব্যর্থ হই। বিগত ১৩/০৮/২০২৩ ইং তারিখে মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বনাথ বরাবরে অভিযোগ দায়ের করি। বিগত ১৬/০৮/২০১৩ ইং তারিখে অনুমান সকাল ১১ ঘটিকার ১,২,৩,৪ নং সাক্ষী সমেত বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সামনে ২নং আসামী দবির মিয়াকে পাইয়া চেক এবং টাকার কথা বলিলে তিনি কিসের টাকা কিসের চেক বলে আমাকে মারতে উদ্যাত হন এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ২নং আসামী দবির মিয়া পুলিশের ভয় দেখাইয়া বলেন যে, তুই আমার নিকট কোন টাকা পাস না, যদি এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলিস তকে প্রাণে মেরে গুম করে ফেলবো। উক্ত বিষয়ে ১নং আসামীর নিকট বিচার প্রার্থী হইলে ১নং আসামী উত্তেজিত হইয়া আমাদের প্রাণে হত্যার ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া তাহার অফিস হইতে বাহির করিয়া দেন।
ঐ দিন বিকেলে আসামী সফুল বিবির বাড়িতে গিয়ে তাহার নিকট টাকা ফেরত চাইলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন।
বাদি আরা উল্লেখ করেন: আসামীগণ সুপরিকল্পিত ভাবে একে অন্যের সহযোগীতায় এবং প্ররোচনায় প্রতারণা করত: টাকা আত্মসাৎ বিশ্বাস ভঙ্গ সহ হুমকি ধামকি প্রদর্শন করিয়াছেন। বর্তমানে ২ ও ৩ নং আসামীর মোবাইল সহ সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নি করিয়াছেন। লোকমুখে শুনা যাচ্ছে যে, আসামীগণ বিদেশে পলায়ন করার পায়তারা করিতেছে। ইতিমধ্যে ২নং আসামী দবির মিয়ার নানা অপকর্ম নিয়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হইয়াছে।
আসামীগণ দরখাস্তকারী বাদীর সরলতা কে কাজে লাগাইয়া মিথ্যা প্ররোচণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করিয়া বাদীকে হত্যার হুমকি সহ লাশ গুম করার কথা বলিলে বাদী থানায় অভিযোগ করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা আমলে না নেওয়ায় সুবিচারের আশায় মাননীয় আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।
আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট অঞ্জন দে ও আইনজীবি সহকারী পলাশ সেনাপতি।
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া, পিএস দবির মিয়া গং আসামীদের উপর দায়েরকৃত প্রতারিত হওয়া বাদি পক্ষের অভিযোগ আমলে নিয়ে (বিশ্বনাথ আমলী আদালত ৩য়)বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা ইয়াছমিন এএসপি সার্কেল কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।