আব্দুল কাইয়ুম , বিশ্বনাথ থেকেঃ
পিতা মাতা, ভাই বোন, স্বামী সন্তান কেউ নেই তাদের। বাবার রেখে যাওয়া ভিটায় দুই রুমের একটি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছেন তিন বোন। যে ঘরে বাস করছেন তাঁরা, সেটি এলাকার প্রবাসীদের সহায়তায় নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। রোগে শোকে কাঁতর এই মানুষগুলোকে দেখার, যত্ন নেওয়ার কেউ না থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁরা। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে সবার ছোট বোন মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে যা পান তাতে তাদের তিন বোনের সংসার চলে না। বয়স না হওয়ায় সরকারি বয়স্কভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, পুঙ্গ ভাতা সহ কোন ভাতাই তারা পান না। মাঝে মধ্যে সরকারি কিছু চাল পান কিন্তু তেল- ডালের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। কেউ দেন, কেউ দেন না। একজনের গলায় বাসা বেঁধেছে টিউমার, এক্সিডেন্ট করে ভেঙেছেন পা। আরেকজন মাথার সমস্যার কারণে পাগলের প্রলাপ বকেন, রাতে ঘুমাতে পারেন না। একজন রোগে ভোগে মারাত্মক দূর্বল, কাজ করার শক্তি নেই তাঁর।
এতক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম, তাদের পৈত্রিক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার পুরানগাও গ্রামে। পুরান গাও গ্রামের মৃত নিয়াজ আলীর তিন কন্যা এঁরা। সুফিয়া বেগম (৫৫), শাফিয়া বেগম (৪৩) ও রাবিয়া বেগম (৪০) এর জীবন এখন এ ভাবেই কাটছে। চাল জুটলে তৈল জুটে না তাদের কপালে। সরেজমিনে গিয়ে তাদের এই করুণ পরিনতি লক্ষ্য করা গেছে । পিতার তত্বাবধানে যৌবনে তাদের বিয়ে শাদি হয়ে ছিল কিন্তু কারো স্বামী ছেড়ে দিয়েছে, কারো স্বামী মারা গেছেন। তিন বোনের মধ্যে কারো কোন সন্তান সন্ততি নেই। মা নেই, বাবা নেই, ভাই নেই, মামা-মামীও নেই। অবশেষে পিতার রেখে যাওয়া দেড়শতক ভুমিতে ঠাঁই নিয়ে জীবনের ভাসমান ভেলা টেনে চলছেন অনিশ্চিত গম্তব্যে তাঁরা। সামনের দিনগুলো কি করে কাটাবেন, চিকিৎসা কোথায় করাবেন, কে করবে তাদের দেখাশোনা এই নিয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানান বিশ্বনাথ উপজেলার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের। একটু তেল- জল, চাল ডাল আর চিকিৎসার সহায়তা চান তাঁরা। তারা চান অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঘরে বসে দু’বেলা দুমুঠো ভাত খেতে। সমাজের বিত্তশালী, বিত্তবান ও দানশীল মানুষের কাছে তাদের চাওয়া, তাদেরকে যেন অর্থ সহায়তা করা হয়।
সবার ছোট বোন রাবিয়া বেগম ( ৪০) বলেন, আমরার কেউ নাই, কেউ আমরার খবর লয় না, একটা পেয়াইজ( পেঁয়াজ) দেয় না কেউ৷ উপাস( উপবাস) করতে করতে শরীল( শরীর) শেষ, এখন হাটতে পারি না। কার কাছে যাইমু ( যাব), কারে কইমু( কাকে বলব)। যদি একটা পুয়া-পুড়ি ( ছেলেমেয়ে) থাকতো তাহলে আমরারে দেখলনে( দেখাশোনা করত)। আমার গলায় টিউমার! পা ভাঙা, পয়সা নাই চিকিৎসার। আপনারা দেশ বিদেশের হকলরে( সকল) কইন ( বলুন) আমরারে সাহায্য করতা ( করতে)। আমরা হখলর ( সবার) সাহায্য চাই। আমরা সবার লাগি ( জন্য) দোয়া করমু( করব)।
তাদের এই অসহায় অবস্থা নিয়ে গ্রামের একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে তার সত্যতা পাওয়া গেছে । প্রতিবেশি আব্দুর রহিম (৫৬) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এঁরা তিন বোন প্রায় ২০ বছর ধরে মানুষের ঘরে ঘরে কাজকাম করে পেট চালায়, এখন তিনজনই বেমার( অসুস্থ) পড়ায় খেয়ে না খেয়ে আছে। তাদেরকে সহায়তা করা দরকার।
এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শামীম আহমদ জানিয়েছেন তিনি মাঝে মধ্যে সরকারি চাল দিয়ে তাদের সহায়তা করেন। সরকারি অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। তিনি যে সহায়তা করেন তা নিতান্তই অপ্রতুল বলে স্বীকার করেন। সমাজের বিত্তশালীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শামীম আহমদ বলেন, দেশে বিদেশে অনেক দানশীল ব্যাক্তি রয়েছেন, এই অসহায় তিন বোনকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাই একটু সহযোগিতা, সহায়তা করুন।
সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা চেয়ে তাদের বিকাশ পারসোনাল একাউন্ট নাম্বার দিয়েছেন তাঁরা। যদি কেউ সহায়তা করতে চান, তাহলে নিম্নের বিকাশ নাম্বারে অর্থ সহায়তা প্রদান করতে পারেন। ভুক্তভোগীদের বিকাশ পারসোনাল নাম্বার – 01747-578872 অথবা বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের এই নাম্বারে যোগাযোগ করার আহবান জানিয়েছেন। -01714-685165–/–