বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকায় বাথরুম-টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতা দবির মিয়ার বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহানের ভুমিকা নিরব। প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান এর নিকট জনসম্মুখে উপজেলার একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করার পরও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইউএনও’র ভুমিকা সন্দিহান বলছেন সচেতন মহল।
প্রধান অভিযুক্ত উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দবির মিয়া শীঘ্রই দেশ ত্যাগের চিন্তা ভাবনা করছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের টাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে প্রতিবন্ধি, গরীব দুঃস্থদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৫ নং দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা দবির মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান এর নিকট উপজেলার ৪ নং রামপাশা ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের বাসিন্দা আনুষ্টানিক ভাবে অভিযোগ করেন। পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান এর ফেইসবুক পেইজে বিগত ৯ ই জুন থেকে এ নিয়ে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হলে উপজেলা জুড়ে তুলপাড় শুরু হয়। ভিডিও ভাইরালের পর বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন তদন্তে এর ব্যাপক সত্যতা পাওয়া গেছে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে যুবলীগ নেতা দবির মিয়ার নেতৃত্বে আরোও অনেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধি, গরীব, দুঃস্থদের কাছে ভাতা, নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল, গৃহ এবং বাথরুম নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলে ফি বাবৎ ২০ থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেছেন এমনটি অনেকের অভিযোগ।
অভিযুক্তদের মধ্যে আরো যারা রয়েছেন; রামপাশা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আছারুন নেছা, ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আবুল কাসেম, মাখর গাঁও নিবাসী মুসা, বৈরাগী বাজারের সুমাইয়া টেইলার্স এর প্রোপাইটর নওধার গ্রামের আব্দুস শহীদ, উপজেলার হাবড়া বাজার এলাকার ছত্তিশ গ্রামের আবদাল হোসেন প্রমুখ।
অভিযোগকারী আমতৈল ফকির টিলা গ্রামের আঙ্গুরুন নেছা, স্বামী আবুল বারী, সুলতানা বেগম, স্বামী নুরুল আমিন। আমতৈল সাদীপাড়ার আয়েশা বেগম, ধলিপাড়ার নুরুল ইসলাম, প্রতিবন্ধি জুবায়ের আহমদ। আমতৈল জমসেরপুরের নুর মিয়া, আমতৈল পুর্বপাড়ারার কুলসুমা বেগম। রায়েনা বেগম, রহিমা বেগম, প্রতিবন্ধি সামছিয়া বেগম, ইদ্রিছ আলী আমতৈল। ধলিপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিন, সায়েক আহমদ। ফয়জুর রহমান জমসেরপুর, সাইফুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, শামছুল মিয়া আমতৈল, মাখর গাঁওয়ের মাছুম আহমদ, সালেহ আহমদ ধলিপাড়া, জিয়া উদ্দিন, কোনাউরা, তেরাব আলী জমসেরপুর, ফজলুল করিম আমতৈল পুর্বপাড়া, ময়নুল ইসলাম ধলিপাড়া, প্রতিবন্ধি আখলাকুর রহমান মাখরগাঁও, জমসের পুরের আলী হুসেন,মখবুল মিয়া। কাচা মিয়া জমসেরপুর কোনাউরা সহ আরো অনেকেই।
অভিযোগকারী সুলতানা বেগম জানান: টিউবওয়েল ও বাথরুম নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে মহিলা মেম্বার আছারুন নেছা তিনির নিকট হতে ২০ (বিশ) হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টিউবওয়েল ও বাথরুম কোনটাই তাকে না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবন্ধি জুবায়ের আহমদের নিকট থেকে ভাতা দেওয়ার কথা বলে দশ হাজার পাঁচশত টাকা নিয়েছেন আবদাল হুসেন কিন্তু কোন কিছুই পাননি তিনি। কাচা মিয়ার কাছ থেকে শহিদ টেইলার ১৬ হাজার টাকা নিয়ে বাথরুম দিয়েছেন টিউবওয়েল দেননি এমন অভিযোগ সবার।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রামপাশা ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড (সংরক্ষিত মহিলা) সদস্য আছারুন নেছা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তিনি হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধী মিলিয়ে মোট ৫ জনের কাছ থেকে টিউবওয়েল স্থাপন ও বাথরুম নির্মাণ করে দেবেন বলে প্রায় ১লক্ষ টাকা নিয়েছেন এবং টাকা গুলো উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়ার পি এস দবির মিয়া ও আমতৈল মাখর গাও গ্রামের মুছা’র কাছে দিয়েছেন। দবির মিয়া কে টাকা দেওয়ার পর কাজ না করায় তিনি টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। কিন্ত দবির মিয়া টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তবে আছারুন নেছা ইতিমধ্যে একজন ভুক্তভোগীকে ৫ হাজার টাকা ফেরত ও দিয়েছেন বলে জানান।
আরেক অভিযুক্ত রামপাশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আবুল কাশেম বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে টিউবওয়েল এর জন্য সরকারি ফি বাবৎ ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছি এবং ৫-৭ জন কে বাথরুম করে দিয়েছি। প্রকল্প চলমান রয়েছে , যারা টিউবওয়েল পাননি তারা পাবেন।
মেয়র মুহিবুর রহমানের কাছে আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ জানিয়েছেন, এটা মুহিবুর রহমানের ব্যক্তিগত ব্যাপার। মুহিবুর রহমান আমার কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো কিছু জানতে চাননি, তিনি জানতে চাইলে আমি অবশ্যই জবাবদিহি করতাম।
এ সম্পর্কে বিশ্বনাথ উপজেলার মাখর গাও গ্রামের মুছার কাছে জানতে চাইলে মুছা বলেন, তিনি টাকা নিয়ে টাকাগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান এর পি এস দবির মিয়ার কাছে দিয়েছেন এবং অনেকেই ভাতা, বাথরুম পেয়েছেন।
আরেক অভিযুক্ত স্থানীয় বৈরাগী বাজারের সুমাইয়া টেইলার্স এর প্রোপাইটর আব্দুস শহীদের প্রতিষ্ঠানে গেলে তাকে না পাওয়ায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি লেনদেনের সাথে জড়িত আছেন উল্লেখ করে বলেন, দবির মিয়া তার সাথে কয়েকজন লোক সহ প্রতিবন্ধি, বাথরুম-টিউবওয়েল প্রাপ্তদের একটি তালিকা নিয়ে তার দোকানে যান। লিষ্টে থাকা লোকদের তাঁর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে বলেন। তার কথামত আমি দরিদ্র-দুঃস্থদেরকে যোগাযোগ করিয়ে দেই। এবং প্রতিবন্ধী ভাতা, বাথরুম ও টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৫- ৩০ হাজার টাকা করে (জনপ্রতি) দবির মিয়া নিয়েছেন । আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেইনি।
এ ব্যাপারে রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.আলমগীর হোসেনের ব্যবহৃত দুইটি মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও ফোন রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রধান অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান এর পি এস দাবী করা যুবলীগ নেতা দবির মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কে-বা কারা অভিযোগ করেছে এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন, ওই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, বিষয়টি তিনি ভাল জানেন।
বিস্তর অভিযোগের ব্যাপারে একাধিকবার সরেজমিনে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়ে না পাওয়ায় পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনির মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভিডিও ভাইরাল ও ভোক্তভোগীদের অভিযোগ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ রাসেল ভূইয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের টাকায় উপজেলা নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। যারা টাকা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন এমন কোন তথ্য আমি জানি না।
প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে কারোও কাছ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্মকতার মাধ্যমে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, আমার দপ্তরের কেউ যদি জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানিয়েছেন, তার কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি, অভিযোগ আসলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।