ডেস্কঃ
দিগন্তজুড়ে সবুজের হাতছানি।দেখলে মন মাতিয়ে যায়। থরথর করে বেড়ে উঠছে রোপা আমন। আর ক’দিন পরেই সবুজ বিস্তৃত মাঠ সোনালী রূপ ধারণ করবে। লালিত স্বপ্ন নিয়ে রূপা আমনের সোনালী ধান হেমন্তের মধ্যভাগে কৃষকের ঘোলায় উঠবে। প্রত্যাশা পূরনে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর মাথাভেজা ঘাম যে জমিনে ঝরেছে, সে জমিন দু’হাত উগলে কৃষকের ঘামের প্রতিদান ফেরত দেবে।
শরতের শেষ দিকে এসে আমন রোপনের আর জমি নেই অবশিষ্ট।লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশি জমিতে এবার আমনের চারা রোপন করেছেন বিশ্বনাথের কৃষকেরা। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না থাকায় উপজেলার সব ক’টি ইউনিয়নে আমনের ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। আধুনিক কৃষি উপকরণের কারণে এখন চাষাবাদ সহজ হয়েছে। আগের দিনের লাঙ্গলের বদলে এখন ট্যাক্টরে জমি চাষ হয়। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে এসেছে মেশিনযন্ত্র। আগাছা নিড়ানির ক্ষেত্রে এসেছে রাসায়নিক উপাদান। এখন ঘাসের ঔষধ ব্যবহার করলে জমিতে আগাছা জন্মায় না। সব মিলিয়ে মানবশ্রম ও সময় অনেকটা সাশ্রয় হচ্ছে। দেশীয় বীজের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন হাইব্রীড জাতের বীজ। তাতে উৎপাদন সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে বলে কৃষকের দাবী। জোতদার কৃষক, প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষী কৃষকের ঘোলা এবার ধানে ভরে উঠবে তার একটি আগাম নমুনা দেখা যাচ্ছে বিশ্বনাথ উপজেলা জুড়ে।
বিশ্বনাথে রোপা আমন চাষের বিষয় নিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম। সময়ে সময়ে পরর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ধানের চারার বৃদ্ধি খুব ভাল হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোন ক্ষতি সাধিত না হলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন ধান পাওয়া যাবে। খাজাঞ্চী ইউনিয়নের কৃষক বারিক মিয়া জানান, আমি প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ একর জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করি। অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার ফলন বেশি পাবো আশা করছি। অলংকারী ইউনিয়নের বর্গাচাষী আইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই মৌসুমে তার ৪ একর আমনের আবাদ রয়েছে, যা অন্য বছরের চেয়ে ১ একর বেশি।খরছ পুষিয়ে এবার একটু বেশি লাভের প্রত্যাশা তাঁর।
বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবার উপজেলা জুড়ে রোপা আমন চাষের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি আবাদ করা হয়েছে। পুরো উপজেলায় মোট আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩২২৫ হেক্টর, সেখানে আবাদ হয়েছে ১৩২৩০ হেক্টর।এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের আমন চাষ হয়েছে ৫০ হেক্টর, উপসী ১০৪৪০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের বিভিন্ন প্রকার ২৭৪০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এবছর উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন শ্রেণীর উপকারভোগী মোট ৮১০ জন কৃষককে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয় বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়। প্রতি কৃষকে কে ৫ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার প্রদান করা হয়।
এছাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষনিক কৃষি পরামর্শের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নে ২ জন, খাজাঞ্চী ইউনিয়নে ৩ জন, অলংকারী ইউনিয়নে ৩ জন, রামপাশা ইউনিয়নে ৩ জন, দৌলতপুর ইউনিয়নে ২ জন, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নে ২ জন, দেওকলস ইউনিয়নে ২ জন, দশঘর ইউনিয়নে ২ জন এবং পৌরসভায় ১ জন সহ মোট ২০ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও প্রধান কৃষি কর্মকর্তার সনম্বয়ে কৃষকের সেবায় ও পরামর্শ দানে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। বিশ্বনাথ কৃষি অফিসে মোট ২৪ টি সৃষ্ট কর্মপদ থাকলে ও বাকী পদগুলো শুন্য আছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায়।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন আবাদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষকেরা সঠিকভাবে কাজ করতে পেরেছেন। নিজেদের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক উৎসাহ প্রদানে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এবছর বিশ্বনাথ উপজেলার কৃষকেরা আমনের বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।