পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বিশ্বনাথে আমন ধানের বাম্পার ফলন লক্ষ্য করা গেছে। বিসৃত মাঠ জুড়ে রয়েছে সবুজ-সোনালী পরিবেশ। আগাম জাতের চাষকৃত জমিতে ইতিমধ্যে পাকতে শুরু করেছে রোপা আমন ধান। তবে ধান কাটা এখনও শুরু হয়নি। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শতকরা ১০ ভাগ ধান একটু একটু পেকেছে। কার্তিকের শেষার্ধ সময়ে এসব ধান কাটার পর কৃষকের ঘোলায় উঠবে নিঃসন্দেহে। বাদবাকি ধান পাকার পর অগ্রহায়ণ থেকে পুরোদমে শুরু হবে কাটার কাজ। আগাম স্বল্পকালীন, মাধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে উপজেলা জুড়ে। ভাল ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে আনন্দের ঝিলিক বইছে। সময়ে সময়ে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় আমন উৎপাদনে বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা। তাদের স্বপ্ন পূরণ ও শ্রমের কাঙ্ক্ষিত প্রতিফল পেয়ে কৃষক হউক উপকৃত, খাদ্যে সয়ং সম্পূর্ণ হোক বাংলাদেশ এমনটাই সবার চাওয়া।
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কৃষক সাদিকুলের সাথে কথা হলে তিনি জানান বেশ কয়েক বছর পর এবার তার রোপা আমন ধান আবাদ খুব ভাল হয়েছে। তার প্রায় ১৮ বিঘা আমন আবাদি জমি রয়েছে, যার থেকে খরচ পুষিয়ে লাভবান হবেন। তবে সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি কাজে মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া কৃষি পণ্যে বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি ধানের বাজার মূল্য নির্ধারণ সহ মধ্যস্বত্তভোগীদের কবজা থেকে কৃষক শ্রেণিকে বাঁচাতে প্রশাসনের নজরদারি করার দাবীও রাখেন। সরজমিনে কথা হয় ১ নং লামাকাজী ইউনিয়নের কৃষক আবদাল মিয়ার সাথে ও রামপাশা ইউনিয়নের তৈয়বুর রহমানের সাথে। তাদের বক্তব্যে ও পাওয়া গেছে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। এবার তাদের ঘোলা ভরবে।
উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে ২০২৪ অর্থ বছরে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৩২৩০ হেক্টর নির্ধারণ করে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি দপ্তর। ইতিমধ্যে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোটাই অর্জিত হয়েছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে। ১৩ হাজার ২শত ৩০ হেক্টর আবাদি জমি থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এবারের রোপা আমন আবাদে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী জীবনকালীন আগাম ব্রি ধান ৯৫,৭৫, ৮৭, বীণা ১১ ও ১৭ জাতের ধান। এছাড়া পরীক্ষামূলক দীর্ঘ জীবন কালীন উচ্চ ফলনশীল ১০৩ জাতের আমন ২০ থেকে ২২ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে, যার থেকে প্রতি একরে আড়াইটন ধান উৎপাদন হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায়। এই ধানের বীজ সংগ্রহ করে আগামী বছর ১০৩ জাতের ধান উপজেলা জুড়ে ব্যাপক হারে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরামর্শ দেওয়ার কথা ও জানান তিনি।
এছাড়া উপজেলার প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের মাঝে এবছর সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। অর্থ বছরে উপজেলার মোট ১২০০/২২০ জন কৃষককে সার ও বীজ প্রদান করা হয়। ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সারের পাশাপাশি ৫ কেজি ধানের বীজ উপকার ভোগী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় জানান, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় রোপা আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও ধানের দাম বৃদ্ধি থাকায় কৃষিতে স্বস্তি পাচ্ছে কৃষক। সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহী হওয়ার আহবান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করতে নিরলস ভাবে কাজ করছে।