নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বিশ্বনাথ উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন অতি সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। চুরি, ডাকাতির ভয়ে আতংকে আছেন এলাকাবাসী।
গেল ১০ থেকে ১৫ দনের মধ্যে ১৫ টিরও বেশি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে উপজেলা জুড়ে। ঘটে যাওয়া চুরি, ডাকাতির ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে না বা আইনি সহায়তা না পাওয়ার আশংকায় ভুক্তভোগীরা হজম করছেন নিভৃতে।
সাম্প্রতিক ঘটনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হচ্ছে গত ২৮শে অক্টোবর খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল চুরি, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের সরুওয়ালা ননকি পাড়া গ্রামের প্রবাসী শফিক মিয়ার ৩টি গরু চুরি।
গত ৮ই অক্টোবর দিবাগত রাতে খাজাঞ্চি ভোলাগঞ্জ গ্রামের আব্দুশ শহীদের গ্যারেজ থেকে সিএনজি (অটোরিকশা) চুরি,গত ৩রা নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কাতার প্রবাসী বিলাল আহমদের বাড়িতে ঘরের গ্রিল কেটে ডাকাতির চেষ্টা, গত ২১শে অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে বিকাশ বিশ্বনাথ জোনের ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসারের সাথে থাকা ৩ লাখ ১ হাজার টাকা ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই। এছাড়া মোবাইল ফোন ও রুপার একটি ব্রেসলেট পৌরএলাকার রামধানা থেকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা, যদিও এই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত ৩০শে অক্টোবর রাতে দশঘর ইউনিয়নের ময়নাগঞ্জ বাজারের শেখ মহল কমিউনিটি সেন্টারে চোর ঢোকে নিয়ে যায় ল্যাপটপ, সিসিটিভি, লাইটসহ মূল্যবান সামগ্রী। গত ৩রা নভেম্বর খাজাঞ্চি ভোলাগঞ্জ গ্রামের ফিরুজ আলীর বাড়ি থেকে শেষ রাতে মোটর সাইকেল চুরি হয়। চোরেরা সুবিদা করতে না পারায় পরে মোটর সাইকেলটি পাশের গ্রামের রাস্তার পাশে (কচুরিপানার ঢাকা অবস্থায়) পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে খাজাঞ্চি কিশোরপুর গ্রামের মাওলানা হাবিবুর রহমানের বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল চুরি। খাজাঞ্চি তেঘরী গ্রাম থেকে গরু চুরির চেষ্টার সময় এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে গরু ফেলে পলায়ন করে চুরেরা। পৌরশহরের হাবড়া বাজার থেকে বাউল সুমন নুরের মোদি দোকান চুরি, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানে চুরি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও বাড়ি থেকে পানির মোটর, মোবাইলসহ আসবাবপত্র চুরির ঘটনা নিয়ে জনমনে আতংক ও উদ্বেগ বাড়ছে। একাধিক ঘটে যাওয়া চুরি, ছিনতাই ও সংঘটিত ঘটনা প্রকাশের বাহিরে থেকে যাচ্ছে। এপর্যন্ত সংঘটিত কয়েকটি অপরাধের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুক্তভোগীরা পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ গড়িমসি করে প্রদক্ষেপ নিতে নমনীয়তা দেখাচ্ছে।
চুরির পাশাপাশি বেড়েছে ভারতীয় চিনি, নাসির বিড়ি, মদ, গাজা ও অন্যান্য অবৈধ মালামালের খোলা রমরমা বাণিজ্য। সিল্করোড় হিসেবে খ্যাত উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রবেশদ্বারে প্রশাসনের নজরদারি কমার কারণে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতী পণ্য।
হঠাৎ করে অপরাধ প্রবনতা বাড়ার কারণ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি বোদ্ধা মহল চিন্তিত। বিগত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়া, পুলিশের টহল না থাকার মত কারণগুলি চিহ্নিত করেছেন উপজেলার বিশিষ্টজন।
এনিয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শাহিন উদ্দিন জানান, বিষয়টি উদ্বেগের। ইদানিং ঘনঘন চুরি, ছিনতাই হচ্ছে।উপজেলায় অপরাধ প্রবনতা বাড়ার বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছি কিন্তু কঠোর ভাবে তা দমনের প্রদক্ষেপ না থাকায় মাত্রা কমছে না। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ছাড়া জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল ও কঠোর হাতে দমন করতে হবে অপরাধীদের।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিশ্বনাথ পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ আব্দুস সোবহান বলেন, প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা জনমনে উদ্বেগের কারণ। রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের জনবল নিয়ে দ্রুত এর করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভা করতে হবে।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুবেল মিয়া জানান, চুরি, ছিনতাই এর এতো অভিযোগ থাকলেও থানায় মাত্র কয়েকটি অভিযোগ ও জিডি করা হয়েছে। টহল কমে যাওয়া ও পুলিশ প্রশাসনের নমনীয় ভাব কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কথাটি সত্য নয়। প্রতিটি এলাকায় টহল অব্যাহত রয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে।