রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকী। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। একই সাথে শহিদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকট আত্মীয়। এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।
লালমনিরহাট পাটগ্রাম উপজেলাধীন দহগ্রাম ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি রওশন জামিল এর উদ্যোগে ১৭ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় দহগ্রাম কফিলউদ্দিন প্রধান ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার্থে পবিত্র কোরান খতম,মিলাদ ও দোয়া মাহফিল শেষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান। তিনি বলেন,আমি শোকাহত চিত্তে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
মঙ্গলবার ১৭ আগস্ট বিকালে দহগ্রাম ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি রওশন জামিল এর উদ্যেগে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পবিত্র কোরান খতম,মাস্ক বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি দহগ্রাম ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ সভাপতি এম আর এইচ সরকার রাকিব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠাতা, দেশ স্বাধীনের পর যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু এখনো অনেক খুনি বিদেশের মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের দ্রুত দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
আয়োজক রওশন জামিল বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলন ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।
বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি দহগ্রাম ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান প্রধান রাশেল বলেন, বাংলাদেশসহ গোটাবিশ্ব আজ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। করোনার প্রভাবে সারাবিশ্ব আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তঃদেশীয় যাতায়াতসহ অর্থনীতি এক মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার করোনাপরিস্থিতিমোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ‘ভয় নয়, সতর্কতা’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে সরকার। পরিবার ও দেশটাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আপনার আমার পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার শহীদ পরিবারের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দহগ্রাম ছাত্রকল্যাণ পরিষদের রওশন জামিল সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দহগ্রাম ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সহ সম্পাদক মেহেদী হাসান, আঙ্গোরপোতা বন্ধু কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সাঈদ ইসলাম, আঙ্গোরপোতা বন্ধু কল্যাণ পরিষদের সহ সম্পাদক লিটন হোসেন সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।