কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ফুলবাড়ীতে চলতি ইরি- বোরো মৌসুমে আগাম জাতের ধান কাটার সময় এখন। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার পালা। কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন পূরণের সময় এখন। জমির ধানে রকমারি স্বপ্ন ছিল অনেকেরই। ধানকেটে কেউ ধার-কর্জ শোধ করবেন। ধান বিক্রির টাকায় ছেলে কিংবা মেয়ের ধুমধাম করে বিয়েও দিবেন।
কেউ আবার ধান বেচে ছেলে-মেয়ের অনেক দিনের বায়না মেটাবেন। হাটে ধান বেচে পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবা কিংবা স্ত্রীর জন্য কাপড় কিনবেন। যাদের জমি নাই তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে ধান লাগিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন – ক্ষেতে উৎপাদিত ধানে দুবেলা দুমুটো খাবারের নিশ্চিন্ত মজুদ করবেন। কারো আবার স্বপ্ন ছিল ধান বেচে আসন্ন ঈদে কেনাকাটা করার। কিন্তু ব্লাস্ট রোগের হানায় ভেঙে চুরমার কৃষকের স্বপ্ন। দুরথেকে দেখে মনে হয় জমির ধান পেকেছে। কিন্তু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় উল্টোটা। ধান আছে ঠিকই, তবে ধানে চাল নেই। আসলে ধান পাকা নয় ব্লাস্ট নামক রোগের হানায় পুড়ে গেছে ক্ষেত। আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করে ফসল হারিয়ে বাকরুদ্ধ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বহু কৃষক। ব্লাস্ট রোগে ফসল হারানোর শোকে স্টোক করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালাটারি গ্রামের আম্বিয়া বেগম(৫০) নামের এক বিধবা কৃষাণীকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ঘরে দেখা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ক্ষেতের ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা ধান ক্ষেতে হঠাৎই ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ধানচাষীরা।
উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বিদ্যুৎ মুকুল ও কৃষাণী রাহেলা বেগম বলেন, মানুষের কাছে ধার-দেনা করে ১২ শতাংশ জমিতে ২৮ ধান লাগিয়েছি। ধানোত রোগ ধরিয়া সব ধান পাতান(চিটা) হয়য়া (হয়ে)গেইছে (গেছে)। আবাদ তো গেল, হামরা এলা (এখন)খামো (খাব)কি বাহে (বাবা)? বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। একই গ্রামের বাছেদ সরকারের ১ বিঘা, বাদল সরকারের দেড় বিঘা, বাদশা সরকারের ২বিঘা, শ্যামল চন্দ্রের ১ বিঘাসহ অনেকেরই জমির ধান পুরোপুরি চিটা হয়ে গেছে। তারা বলেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মোবাইল করে ডেকে এনে পরামর্শ নিয়ে ঔষধ দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, অন্যের কাছে ২বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তিনি ধানচাষ করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল হঠাৎ করে জমির ধান গাছের পাতা ও শীষ শুকাতে শুরু করলে তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বললে ঔষধ লিখে দেন। সেই ঔষধ জমিতে স্প্রে করেও ফসলের কোন উন্নতি হয়নি।