মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুষ বানিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের আখড়া হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয় জেলার প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে দূর্নীতি মুক্ত রাখার ঘোষণা দিলেও সকল নীতিমালা উপেক্ষা করে যাচ্ছে এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদিকে জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে পরিচিত এই সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটিতে প্রকাশ্যে ঘুষ বানিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের কথা জেনেও না জানার ভান করছে এ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা। প্রকাশ্যেই চলছে দুর্নীতি, লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়ম।
নেয়া হচ্ছে না এসবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা। সদর-সাব রেজিষ্ট্রার মো: সাহাজান মোল্ল্যা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অত্র অফিসে সরকারী সেবা নিতে আসা জণ-সাধারণের নিকট থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা অফিসের হেডক্লার্ক ছরয়ার মল্লিক এছাড়া ও দলিল লেখক সমিতির কিছু অসাধু চক্র ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি-অনিয়মসহ হয়রানি করছে নানাভাবে। অপরদিকে দালাল চক্র জাল-দলিলসহ নানা প্রকার দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে জনগনের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ ও বেআইনীভাবে রেজিস্ট্রি করার সুবাদে সমাজের প্রভাবশালীরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত একর জমি দখল করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে অবৈধ কর্মকান্ড ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থাও।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মী, পুলিশ প্রশাসনসহ নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকদের হাত করে নেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। দলিল করতে আসা ভুক্তভোগীরা জানায়, নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রার ও একই দালালদের যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বালাম টেম্পারিং ও পাতা ছিড়ে ফেলার নানারকম অভিযোগ রয়েছে অফিসের রেকর্ড রক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে সরকারকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে রাজস্ব ফাকি দিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন দলিল রেজিস্ট্রি করে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছেন অত্র অফিসের কতিপয় দলিল লেখক ও অফিস সংশ্লিষ্টরা। সাব-কবলা দলিলের ক্ষেত্রে ১১% হারে রাজস্ব নেয়ার কথা থাকলেও দাতা ও গ্রহিতাদের জিম্মি করে প্রতি লাখে ১৭% হারে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাব-রেজিস্টারের সম্মুখে প্রকাশ্যেই অফিসের হেডক্লার্ক ছরয়ার মল্লিক প্রতি দলিলে ২ হাজার টাকা করে আদায় করছে। ছরয়ার মল্লিক সকল দলিলাদি নিজেই দেখাশুনাসহ প্রকাশ্যেই দলিলে স্বাক্ষর করে থাকেন বলে জানা যায়।বসতবাড়িকে নাল, নাল জমিকে ডুবা, ডুবা জমিকে জলাশয় দেখিয়ে দলিল করায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকায় দলিল লেখক সমিতির দ্বারা পরিচালিত একটি সন্ত্রাসী চক্র রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দলিল দাতা-গ্রহীতাদের নিকট থেকে দলিলের টাকা ছিনিয়ে নিতে প্রাণ-নাশের হুমকিও দিয়ে থাকে এই চক্র। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য মতে প্রতিদিন গড়ে১০০টি দলিল হয়ে থাকে।২ হাজার টাকা হারে দলিলপ্রতি ঘুষ গ্রহন করলে ১০০টি দলিলে প্রতিদিন ২,০০০০০/= টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রারের হেডক্লার্ক ছরয়ার মল্লিক। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের চারপাশে রয়েছে দালাল এবং
ভূমিদস্যুদের এক মিলনমেলা। এসব দালালদের সাথে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে মুল কপি না দেখে এবং সঠিক কাগজপত্র না নিয়ে জাল ও ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে অনেক দলিল রেজিস্ট্রি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে হেডক্লার্ক ছরয়ার মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন
আমি সাব রেজিস্টার স্যারের নির্দেশে সব কাজ করি।আমি আর কিছু বলতে পারবো না। আপনারা স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।
এসব বিষয়ে নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো: সাহাজান মোল্ল্যার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার জন্য বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, একজন সাবরেজিস্টার ও হেডক্লার্ক ছরয়ার মল্লিক নড়াইল সদর উপজেলার সাধারণ মানুষদের জিম্মী করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।