মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টুঃ
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় দেশের প্রাচীনতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৫৭ সালে তৎকালীন নড়াইলের জমিদার কতৃক রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিমাই চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে গোপনে নিয়োগ প্রদান,যোগসাজসে স্কুলের গাছ ও মাটি বিক্রিসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে গোপনে,জানে না শিক্ষক,কর্মচারি ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অনেক সদস্যই।আগেই প্রার্থী ঠিক করে,পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখা হয়েছে।অস্থায়ীভাবে চতুর্থ শ্রেণি পদে মোঃ বাবলু মোল্লা ও অঞ্জনা বিশ্বাস কাজ করলেও অঞ্জনা বিশ্বাসকে রেখে বাবলুকে গত বছরের এপ্রিল মাসে কোন কারণ ছাড়াই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
এর আগে ১০ লক্ষ টাকায় বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে সুফল কুমার বিশ্বাসকে। চাকরি পেতে সুফল বিক্রি করেছেন পৈতৃক জমি।প্রধান শিক্ষকের নিজের নিয়োগেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ২ জন প্রক্সি প্রার্থী দিয়ে কোরাম পূর্ণ করে পদ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল,সহকারি শিক্ষক আবু দাউদ,ফারহানা নাজনীন,বিউটি খাতুন,সামিনা পারভীন,গোলাপী বিশ্বাস ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সাগর গাঙ্গুলির সাথে কথা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কবে কোন পত্রিকায় দেওয়া হয়েছে এসব বিষয়ে তাদের জানা নেই বলে জানান।তারা আরো বলেন,দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বাবলু অস্থায়ীভাবে কাজ করলেও হঠাৎ তাকে সরিয়ে দেওয়া অমানবিক।বাবলুকে সরিয়ে দিয়ে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অভিবাবক সদস্য বিষœুপদ ও কার্তিক বিশ্বাস এর কাছে জানতে চাইলে বলেন,নতুন নিয়োগের ব্যাপারে তাদেরকে কোন কিছুই জানানো হয়নি।
এ ছাড়া যোগসাজসে স্কুলের জমির গাছ ও মাটি বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।মোঃ জামালউদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষককে বার বার স্কুলের জমির গাছ ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার খবর দিলে এই যাচ্ছি,লোক পাঠাচ্ছি বললেও আর খোজ-খবর নেয় না।এ গুলো প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে ছাড়া সম্ভব নয়।
সদর উপজেলার শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সদর উপজেলার শিক্ষক সমিতির সধারণ সম্পাদক ছিলেন।সে সময় সমিতির প্রায় কোটি টাকার ফান্ড লুটপাট করে সমিতিকে ভেঙ্গে দিয়েছেন। রাতের বেলা সমিতি অফিসে বসাতেন জুয়া ও মদের আসর। পুলিশের হাতে কয়েকবার আটক হয়েও ছাড়া পেয়েছেন, সমিতি অফিসে প্রভাবশালীদের নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে।
গত দুই দিন আগে প্রধান শিক্ষক নিমাই চন্দ্র পালের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে বলেন,আমার স্কুলে নিয়োগ হয়ে গেছে। আমার এখানে যোগাযোগ করে কোন লাভ নেই। সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বলেন,নিয়োগ এখনো হয়নি।মোবাইলে কেন বললেন নিয়োগ হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,দুর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল বলে ওরকম বলে ছিলাম।প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি,পত্রিকায়,ওয়েবসাইট,ফেসবুক, নোটিশ বোর্ডসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্ত আপনার বিজ্ঞপ্তি কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি,এমনকি শিক্ষক-কর্মচারি ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অনেক সদস্যই জানে না। এর কারন কি? তখন প্রধান শিক্ষক বলেন ,আমি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পত্রিকা সংগ্রহ করেছি আরকি।স্কুলের গাছ-মাটি বিক্রয়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।