নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলম, শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহমুদসহ আওয়ামীলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ১১ টায় নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় শাহাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পান্না,মহব্বত খান, সাধান বিশ্বাস, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নিলয় রায় বাঁধনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহমুদ লিখিত বক্তব্যে বলেন,আমি অত্র ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানএবং শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। শাহাবাদ ইউনিয়ন জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় রাজাকার পুত্র জিয়াউর রহমান জিয়ার নিকট আমি পরাজিত হই। সেই থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন প্রকার হয়রানি। আমার জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবার ওয়ারেশ কায়েম সনদের জন্য আবেদন করি। নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মোঃ ইমরান হোসেন তদন্ত করে ওয়ারিশ কায়েম সনদের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করে।কিন্তু চেয়ারম্যান ওয়ারেশ কায়েম সনদ নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে।এক পর্যায়ে জিয়া চেয়ারম্যান সনদ বাবদ আমার নিকট ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা দাবি করে।তখন আমি নিরুপায় হয়ে আমার বন্ধু জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলমকে অবহিত করে সহযোগিতা চায়।গত ১০ই মার্চ সকালে আলম জিয়াকে ফোন করলে জিয়া আলমকে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলে। আলম আমাকে(মাহমুদ) ফোন দিয়ে তখন জানায় আমি শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আসতেছি, তুমিও পরিষদে আসো। আমি পরিষদে উপস্থিত হওয়ার আনুমানিক ১০-১২ মিনিট পর আলম ইউনিয়ন পরিষদে আসে। তখন আনুমানিক সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। সে সময় ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট পুলিশ অফিসারদ্বয়সহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। সরদার আলমগীর হোসেন আলমের অনুরোধক্রমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমরান হোসেনের সুপারিশকৃত ওয়ারেশ কায়েম সনদে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া স্বাক্ষর করে দেন।এর পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া নিজস্ব আইডিতে সরদার আলমগীর হোসেন আলমের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেখতে পাই। যাতে লেখা ছিল, “মৃত মোজাহের হোসেনের ওয়ারিশগণ আজ আমার অফিসে এসে জোরপূর্বক ওয়ারেশ সনদে সই নিয়ে গেলেন। হাইরে রাজনীতির দাপট।”
জিয়া আমার পরিবার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলমের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করে। উক্ত ইউনিয়নের জামায়াত-বিএনপি ও রাজাকার পরিবারের দোসররা সেই ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ গত ইংরেজি ১২/০৩/২০২২ ইং তারিখ বিকালে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, বিধবা জেসমিনের জমি দখল করা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।সরদার আলমগীর হোসেন আলম, সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পান্না এবং আমার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রকৃতপক্ষে মোজাহের হোসেনের মৃত্যুর পূর্বে ২য় স্ত্রী জেসমিনকে ২০২০ সালের ১৬ জুন তালাক প্রদান করেন। ১ম স্ত্রী নাসিমা সুলতানা ও তার কন্যা আসমা সুলতানা সুমি তাদের ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি অফেরতযোগ্য পাওয়ার অফ এ্যাটর্নির মাধ্যমে আশরাফ খান মাহামুদ ও মহব্বত খানের নিকট নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে হন্তান্তর করেন। যার দলিল নং- ৪৬৮১/২১, তারিখ- ২০২১ সালের ১৫ জুন।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মিরা আশরাফ খানের কাছে মোজাহের হোসেনের স্ত্রী জেসমিনকে তালাক দিলে মোজাহের মৃত্যুর দিন পর্যন্ত জেসমিন পাশে ছিল।মোজাহের হাসপাতলে মৃত্যুর পর জেসমিন স্বামীর লাশ গ্রহণ করছে এবং পেনশন পাচ্ছে এ রকম ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে । তাহলে কিভাবে তালাক হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন,সাংবাদিকের কাছে কি আছে কি নাই সেটা আমি জানি না,এগুলো আমার জানার বিষয় না। মোজাহেরের হাসপাতালে মৃত্যু,লাশ গ্রহণ,পেনশন আমি দেখব না আমি ওয়ারেশ কায়েম সনদ অনুযায়ী জমি কিনেছি। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন শেষ করে উঠে পড়েন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আশরাফ আমার নিকট ওয়ারেশ কায়েম সনদের আবেদন করেনি এবং টাকা চাওয়া হয়নি।সরদার আলম ইতিপূর্বে প্রকাশিত সকল সংবাদমাধ্যম কে বলেছেন ১০ তারিখে আমার অফিসে যাননি। কিন্তু আশরাফ খান মাহামুদ বক্তব্যে পরিস্কার বলছেন তার পক্ষের লোক হিসাবে যে সরদার আলমগীর হোসেন ১০ তারিখে আমার অফিসে গিয়েছিলেন। ১০ তারিখে আমার অফিসে গেলেন,তাহলে ০৮-০৩-২২ তারিখ দিয়ে সহি করানো ওয়ারেশ সনদ নিলো কেন? এ ছাড়া তিনি বলেন,আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী আদর্শের রাজনীতি করি। আমি ৫ নং শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। আশরাফ খান মাহামুদ মিথ্যা তালাক বানাইয়া একজন ওয়ারেশ কে বাদ দিয়া অপরাধের পর অপরাধ করছেন।তিনি প্রশাসনের কাছে মানবিক আবেদন জানিয়ে, নড়াইল জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন, আশরাফ খান মাহামুদ সহ সকলের বিরুদ্ধে বিধবাকে বাড়ি থেকে বের করে বাড়ি দখল, জোরপূর্বক ওয়ারেশ সনদ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহনের দাবি করেন।
Leave a Reply