নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল পৌর এলাকার দূর্গাপর গ্রামের এক গৃহবধুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগে গৃহবধুর স্বামী, শশুর ও শাশুড়ির নামে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ মার্চ) রাতে নির্যাতিতা গৃহবধুর পিতা মো: হোসেন ইমাম ওরফে তৈয়মুর বাদি হয়ে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামীরা হলো- নির্যাতিতা গৃহবধুর স্বামী সজিব ,শশুর বিএম নজরুল ইসলাম এবং শাশুড়ি স্বপ্না বিশ্বাস। মামলা নং ১০/২১ তারিখ-১৩.০৩.২০২১
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন বাঁশগ্রাম বিট অফিসার এসআই মো: আমিন উদ্দিন লিটন। আজ রোববার সদর আদালতে নির্যাতিত গৃহবধুর জবানবন্দি (১৬৪) নেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: আমিন উদ্দিন লিটন জানান, গতকাল শনিবার এ মামলা দাখিল করা হয়। আমাকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি মামলার তদন্তের কাজ শুরুকরেছি। তদন্ত শেষে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে পারবো।
তিনি বলেন, এ মামলাটি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ২০১০,৩০ ও প্যানাল কোডের ৩০৭, ৩২৩, ৩২৫ ৩২৬, ৩২৮, ১১৪ ধারায় করা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে এ বিষয় সজিব এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন। জান্নাত আরা সেতু আমার স্ত্রী তার মাথার চুল কখন কিভাবে কাটা হয়েছে আমি তার কিছুই জানি না। এ সব তারই (স্ত্রী) বানানো কথাবার্তা।
উল্লেখ্য- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খড়রিয়া গ্রাম। কথিত আছে এ গ্রামের একই পরিবারে প্রায় অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধার জন্ম। মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুর রহমান ওরফে শাম দারোগার নাম অধিকাংশ মানুষের কাছে পরিচিত। সেই গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মো: হোসেন ইমাম ওরফে তৈয়মুর এর ঘরে জন্ম নেয় জান্নাত আরা সেতু। ২০ বছর বয়সে তার পারিবারিক ভাবে প্রবাসি সজিবের সাথে বিয়ে হয়। তার বর্তমান বয়স ২৪, ১টি ছেলে ও ১টি মেয়ে রয়েছে।
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, স্বামী সজিব (২৮) ও তার পরিবারের লোকজন শুক্রবার গভীর রাতে আমার মেয়ে জান্নাত আরা সেতুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। পুলিশের সহাতায় নিয়ে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নড়াইল সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে বেডে সুয়ে মূমুর্ষু জান্নাত আরা সেতু অচেতন অবস্থায় বার বার ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছেন। ডাক্তার এসে তাকে স্পর্শ করামাত্রই ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছেন। সেতু জানান, তাকে শরীরের নানা জায়গায় নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি সব কিছু ভুলে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, তাকে জোর করে এক সঙ্গে অনেকগুলি ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য- ২০১৬ সালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি ইউনিয়নের কালডাঙ্গা গ্রাম, বর্তমান নড়াইল পৌরসভার দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিএম নজরুল ইসলামের ছেলে সজিবের সাথে পারিবারিকভাবে জান্নাত আরা সেতুর বিবাহ হয়। জান্নাত আরার আদি নিবাস কালিয়া উপজেলার খড়রিয়া গ্রাম, বর্তমান নড়াইল পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল গ্রামে তার বাবার বাড়ি।
এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, সেতু সজিব এর ২য় স্ত্রী। এর আগে সজিব মাগুরা জেলায় বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে সজিব জান্নাত আরা সেতু নামের এই মেয়েটিকে বিয়ে করেন।