মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু নড়াইল :
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার অনুমোদন বিহীন ইটভাটায় কাঠ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ইট পোড়ানো হলেও তা বন্ধে তেমন কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। অভিযোগ আছে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই বহাল তবিয়তে চলছে অনুমোদন বিহীন এই ইট-ভাটা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইট-ভাটা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন্ অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার বিধান রয়েছে। উপজেলার বসুপটি,চৌগাছা,বুড়িখালি,নড়াইল, কালনা-নড়াইল মহাসড়কের পাশে সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে কোনো রকম অনুমোদন ও পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই মেসার্স চিত্রা ব্রিকস ইটভাটা চলছে। ইটভাটাটি লোকালয়ের পাশে এবং ফসলী জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করেই এই ভাটা চালানো হয় বলে ইটভাটাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বসুপটি,চৌগাছা,বুড়িখালি,নড়াইল, কালনা-নড়াইলর মহাসড়কের পাশে সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে মেসার্স চিত্রা ব্রিকসের সত্তাধীকারী: মো: বাদশা শেখ, মো:আনিচুর রহমান,মো: জুনায়েদ হুসাইন গং প্রতিদিন শতশত মন কাঠ ইট-ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভাটা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে নসিমন, ট্রাকটর, এবং ঘোড়ার গাড়িতে কাঠ সংগ্রহ করে মেসার্স চিত্রা ব্রিকস। আর সেই কাঠ দিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ইট-ভাটা।
নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলায় ২৫টি ইট-ভাটা আছে। যার মধ্যে জিকজ্যাক দুইটি, ফিক্সড পাঁচটি, টিন চিবনি সতেরটি আছে। যার বেশিরভাগই চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ১২ ও ৪(২) (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফসলি জমিতে অথবা ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করা দন্ডীয় অপরাধ। তবে লোকালয়ে এবং ফসলি জমিতে স্থাপিত লোহাগড়া উপজেলার এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা জানান, যাঁরা ইটভাটা করছেন তাঁরা খুবই প্রভাবশালী। এ কারণে ইট-ভাটার ধোঁয়ায় শ্বাষকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও মানুষ তাদের ভয়ে কিছু বলছে না।
প্রায় ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থাপিত মেসার্স চিত্রা ব্রিকস এর মো: বাদশা শেখ জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা পরিচালনা করছি। এসময় মো: আনিচুর রহমান ও তার অনুসারিরা এ প্রতিবেদককে নিউজ প্রচার বন্ধে ব্যার্থ চেষ্টাও করেন।
লোকালয়ের খুব কাছে স্থাপিত এই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
অধিক মুনাফালোভী ইট-ভাটার মালিক যারা প্রতিদিন শতশত মন কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংশের যে মহোৎসবে মেতে উঠেছে তা বন্ধে জেলা প্রশাসন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি আঞ্জুমান আরা বলেন, জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যহত থাকবে। আমরা প্রতিবছরই অবৈধ ইট ভাটা একেবারই কখনো কখনো ভেঙে দিয়ে আসি। কখনে জরিমানাও করি। আমরা গতবছরই তাদেরকে সতর্ক করেছিলাম এ বছর কেউ অবৈধ ভাবে ভাটা চালু করবে না। এর পরেও যদি কেউ নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করে ভাটা চালু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।