মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু নড়াইল :আড়াই বছর বয়সী শিশু আবুতালহা। পিতার নাম মোঃ শামীমুর রহমান বুলু। বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের চরব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে। শিশুটির পিতা সাতক্ষীরায় একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরী করেন।
গত ঈদুল ফিতরে সবাই গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন ঈদ উদযাপন করতে। ঈদের পর পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে রেখে কর্মস্থলে ফিরে যান শামীম। শিশু তালহা মায়ের সাথে দাদা বাড়িতে বেশ আনন্দে হেসে খেলে বেড়াচ্ছিলেন।
বুধবার (২ জুন) ফজরের আযানের পরই শিশু আবু তালহাদের বাড়িতে হামলা চালায় এলাকার প্রতিপক্ষরা। গ্রাম্য কোন্দলের জের ধরে ওই হামলায় শিশু আবু তালহা রক্ষা পায়নি। ঘুমন্ত অবস্তায় তালহার কপাল ও মাথায় ইটের আঘাত লাগে। প্রতিপক্ষের লোকজন ঢাল, সড়ক, ইট পাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রাদি নিয়ে ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করে। এসময় পরিবারের সদস্যরা ঘরের মধ্যে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। হামলাকারীরা চলে যাবার পর শিশুটিকে নড়াইল সদর হাসপতাালে ভর্তি করা হয়।
নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সুজয় রায় বলেন, শিশুটির মাথায় আঘাত লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে’।
শিশুটির পিতা শামীমুর রহমান বুলু বলেন, ‘ এলাকায় দলাদলি আছে। তাই বলে আড়াই বছরের শিশুর ওপর এভাবে হামলা করতে হবে? নড়াইলের পুলিশ সুপার স্যারের হস্তক্ষেপে এলাকায় শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করায় আমার পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু নাজির মোল্যার লোকজন আমার আড়াই বছরের ছেলেটিকে যেভাবে মেরেছে তার সঠিক বিচার চাই’।
এদিকে ১জুন বিকালে ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারে চায়ের দোকানদার জিয়ার ওপর লাঠিসোটা, হাতুড়ী ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে নাজির মোল্যা গ্রুপের লোকজন। বেপরোয়াভাবে মারধর করে ফেলে রেখে যায় চায়ের দোকানী জিয়াকে। ঠেকাতে গিয়ে জিয়ার ছোট ভাই মিলন আহত হন। দুজনকেই নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানাগেছে, লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা, চর-ব্রাহ্মণডাঙ্গা, বাড়ীভাঙ্গা ও হান্দলা গ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন নাজির মোল্যা ও মাহাবুব মোল্যা। এই গ্রুপের ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল হক রোম ও সাবেক চেয়াম্যান নুরুজ্জামান নূরনবী।
অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তাইজুল মোল্যা ও জাকির মেম্বর। এই গ্রুপের ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু।
সম্প্রতি মাহাবুব নামে একজন মাতুব্বরের ওপর হামলা করেন তাইজুল মাতুব্বরের গ্রুপের লোকজন। এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় গত ২৪ মে ব্রাহ্মণডাঙ্গা মাদ্রাসা মাঠে শান্তি মিটিং করেন। পুলিশ সুপার বক্তব্যকালে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে লোহাগড়া থানার সদ্য বিদায়ী ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান, নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালু, সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল হক রোম, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নূরনবী সহ উভয় দলের স্থানীয় মাতুব্বর ও তাদের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে পুলিশ সুপারের সেই অনুরোধ রক্ষা করেননি এলাকার একটি গ্রুপ। যার কারনে এলাকাটি আবারও অশান্ত হয়ে পড়েছে।
লোহাগড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত আছে।’