মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু নড়াইল : সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর দূর্ণীতির মধ্য দিয়ে চলছে নাঈমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক। গত ০৬ মার্চ ২০২০ তারিখে সরজমিনে ক্লিনিকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাচাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র। ক্লিনিকে দায়িত্বরত কোন সার্জন তো নেই, নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। সেবা প্রদানে সহায়তাকারী হিসাবে ডিপ্লোমাধারী নার্স বা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ওয়ার্ডবয় এর ও দেখা মিললো না। নোংরা অপরিকল্পিত ভাবে চলছে ক্লিনিকটি।সেবার নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপারেশন থিয়েটার, ওয়ার্ড, বেড সব কিছু অপরিচ্ছন্ন। এমনই আজব প্রতারনার ফাঁদ পেতেছেন নড়াইল সদরের নাঈমা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক রেজাউল করিম।
বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিনেন্স অনুযায়ী নার্সিং শিক্ষায় নুন্যতম ডিপ্লোমা ডিগ্রি না থাকলে কাউকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নার্স হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় না। নাঈমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক যেন এ আইনের আওতার বাইরে। ক্লিনিকে কর্তব্যরত সেবিকা পলির কাছে প্রকৃত সনদধারী নার্স কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন প্রতিষ্টানিক শিক্ষা সনদ নেই আমি স্যারদের কাছ থেকে শিখেছি। এমন অবস্থায় ক্লিনিক পরিচালনার দায়িত্বরত কর্মকর্তার খোজ নিতে গিয়ে নীচ তলায় অফিস কক্ষে পাওয়া গেল প্রতিষ্ঠানের খোদ মালিক রেজাউল করিম কে। তার কাছে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সরকারী যে লাইসেন্স প্রয়োজন তা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় গত জুন ২০২০ সালে উক্ত লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
ক্লিনিক সেবা প্রদানের নামে চলছে আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড। গর্ভপাত করানোর নামে ০৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে জীবন ঝুকির মুখে ফেলছে। এ ধরনের অবৈধ গর্ভের সন্তান নষ্ট করার অভিযোগও রয়েছে ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে। গত ০৫ মার্চ ২০২১ খ্রীঃ আনুমানিক সন্ধ্যা ০৭:০০ ঘটিকায় নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের বামনহাট গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়–য়া এক ধর্ষিতা কিশোরীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য দালালের মাধ্যমে নাঈমা ক্লিনিকে এনে ঔষধ প্রয়োগ করে এবং উক্ত ক্লিনিকেই একটা জীবিত পুত্র সন্তান প্রসব করার কিছুক্ষণ পরে সন্তানটি মারা যায়।
এব্যাপারে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে নড়াইল সদর থানায় ০৬ মার্চ ২০২১ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু হয়, মামলা নংঃ ০৮। কিশোরী ধর্ষণ ও গর্ভের সন্তান নষ্ট করার খবর পেয়ে নাঈমা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে সাংবাদিক এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার ০২ জন সদস্য ঘটনাস্থলে উপ¯িহত হয়। সাংবাদিকরা বিষয়টা জানতে চাইলে সাংবকাদিকদের উপর চড়াও হন ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই ধর্ষিতা কিশোরীর ভাই কুবাদ মোল্লা ও জিয়াউর রহমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন সাংবাদিক খবর দিলি কেন? আমার টাকা দিয়ে রোগী নিয়ে যা। তাৎক্ষণিক মুমূর্ষ অবস্থায় রোগীকে জেরপূর্বক ক্লিনিক থেকে বের করে দেয় রেজাউল করিম। পরবর্তিতে নড়াইল সদর হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করে তার স্বজনরা।
গত শনিবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৫ জন। ভর্তি রোগীদের সাথে কথা বলে আরও জানাগেছে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম, এবং সাধারন ডেলিভারীর কাজ করেন আয়া, ঝারুদাররা । আলট্রাসনো করেন বাইরে থেকে ,স্থায়ীভাবে থাকেনা কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। নারী পুরুষ রোগী, রোগীর স্বজন একই ওয়ার্ডে রাত্রি যাপন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম আয়া,ঝাড়ু দারদের দিয়ে অবৈধ গর্ভপাত করান এবং নিজেই তার তদারকি করেন একাজে প্রতিটি অবৈধ গর্ভপাতের ফি ৮/১০হাজার টাকা নেয়। অথচ ক্লিনিকে বিভিন্ন সার্জনের নাম ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এব্যাপারে ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম জানান, তার ক্লিনিকে ১০ টি বেড আছে, ৪/৫ জন ডাক্তার আছে কিন্তু‘ স্থায়ী ভাবে কেউ থাকেনা। আবাসিক মেডিকেল অফিসার কেউ নাই। ফোন করলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসেন।
দুইজন নার্স আছে একজনের নাম পলি আর অন্য জনের নাম অঞ্জনা। ডিপ্লোমাধারী সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন পলি হচ্ছে ডিপ্লোমাধারী নার্স। কিন্তু তাৎক্ষনিক সনদের অনুলিপি দেখাতে পারেনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডাক্তার ও নার্স ইত্যাদি অনিয়মের কথা বললে ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম বলেন, নড়াইলে এতনিয়ম কোন ক্লিনিক মানেনা। নড়াইলের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতা ফোরামের আহবায়ক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে নড়াইলে অবৈধ ক্লিনিক ব্যবসা চলছে, সি এস সাহেবরা এসেই দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক করে ফেলবেন বলেন, কিন্তু কোন কারণে, কিছুই ঠিক হয়না তার কারন বোঝা যায় না।
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার বলেন, লাইসেন্স না থাকলে সেই ক্লিনিক গুলো আমরা বন্ধ করে দেব।