নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে চাঞ্চল্যকর জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে। নড়াইলের কুখ্যাত ভূমি সন্ত্রাসী খান কবির ওরফে লেবু কবির ওরফে জালিয়াত কবির নড়াইল দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সম্পাদকের সহযোগিতায় ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির জাল দলিল সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এহেন জালিয়াতির ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, নড়াইল পৌর শহরের ৬৩ নং নড়াইল মৌজার এসএ ২৩৮ নং খতিয়ানের ৯১ শতক জমির জাল দলিল সৃষ্টি করে ৩ কোটি টাকার সম্পত্তি প্লট করে বিক্রি করছেন নড়াইলের চিহ্নিত ভূমিদস্যু খান কবির ওরফে লেবু কবির। চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬৩ নং নড়াইল মৌজার এসএ ২৩৮ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক শৈলেন্দ্রনাথ সরকার ও অনন্ত কুমার সরকার। ওয়ারেশসূত্রে এ জমির মালিক হন সুজন সরকার। সুজন সরকারের নিকট হতে ১৯৮৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রেজিষ্ট্রি দানপত্র নং ৬০৮৭ মূলে মালিকানা অর্জন করেন ভ্রাতা বিজয় সরকার। বিজয় সরকার নামজারি কেস নং-৩৪৩/৮৭-৮৮ মূলে নিজ নামে নামপত্তন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ৩১ মার্চ বিনিময় দলিল নম্বর ১৮৬৫ মূলে এম আলী আজগর মালিকানা অর্জন করেন। আলী আজগর নামজারী কেস নং ১২৩/৯৭ মূলে নিজ নামে নামপত্তন করেন। ডিপি ১৫০ খতিয়ানে এম আলী আজগর নিজ নামে আরএস রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর রেজিষ্ট্রি হেবা দলিল নং ৬৬৬৭ মূলে উক্ত জমি আলী আজগর নিজ স্ত্রী মিসেস শামীমা আজগর কে ২৫ শতক, ২ কন্যা আননাজিয়াত আজগর ও আসফাহান আজগরকে ৬৬ শতক সর্বমোট ৯১ শতক জমি দান করেন। আলী আজগরের উক্ত ২ কন্যা দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ স্থায়ী ভাবে আমেরিকায় থাকেন এবং সেখানে পড়াশুনা করেন। আলী আজগর স্ত্রী ও ২ কন্যার নামে হেবা দলিল মূলে জমির মালিকানা হস্তান্তর করলেও জমি নিজ দখলে রাখেন। পরবর্তীতে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ দামী এ জমির উপর কু-দৃষ্টি পড়ে নড়াইল শহরের ভাদুলীডাঙ্গার ভূমিদস্যু খান কবিরের। তিনি আলী আজগরের নিকট হতে এই জমি নেয়ার জন্য নানা ভাবে ফুসলাতে থাকেন। আলী আজগর তাকে জানিয়ে দেন এ জমি তিনি স্ত্রী ও কন্যাদের নামে হস্তান্তর করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ও কু উদ্দেশ্যে খান কবির ওই জমি নেয়ার জন্য আলী আজগরকে সুকৌশলে জালিয়াতি করার জন্য প্ররোচনা দেন। সেই মোতাবেক ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ২ মহিলাকে আলী আজগরের কন্যা সাজাইয়া এবং জাল ছবি ও আইডি কার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রি হেবা দলিল করে আলী আজগরের নামে ফেরত নেন। যার হেবা দলিল নং ৬৬৬৬। এ দলিলে আলী আজগরের ২ কন্যার ছবির স্থলে নড়াইল সদরের আউড়িয়া গ্রামের হাসানের স্ত্রী ও তার ভাইয়ের কন্যার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যা মূল দলিল দেখলে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে। ওই একই দিনে ওই সমুদয় সম্পত্তি নড়াইল শহরের ভাদুলীডাঙ্গার মৃত খান নুরুল ইসলামের ছেলে চিহ্নিত জালিয়াত খান কবির রেজিষ্ট্রি পাওয়ার অব এ্যাটর্ণী নং ৬৬৬৭ মূলে আলী আজগরকে দাতা সাজাইয়া উক্ত জমি প্রাপ্ত হন। জাল দলিল এবং পাওয়ার অব এ্যাটর্ণী দলিল একই রাতে কমিশন মারফত খান কবির হোসেনের বাড়িতে রেজিষ্ট্রি হয়। রেজিষ্ট্রির দিনে আলী আজগরের কন্যাদ্বয় আমেরিকাতেই ছিলেন। এসব জাল জালিয়াতি কার্যক্রমের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন নড়াইল দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।দলিল নং ১০৫০/২০১৯ এবং ২৭৬১/১৯ দেখলে জালিয়াতির সুস্পষ্ট প্রমান মিলবে। সচেতন মহল জাল দলিলের মহাকারিগর খান কবির ওরফে লেবু কবির এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, এসব চিহ্নিত জালিয়াত ও ভূমিদস্যুদের বিচারের দাবিতে ফূঁসে উঠেছে নড়াইলের আপামর জনতা। এসব জালিয়াতির ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলাকার ৩ জন ব্যক্তি পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন।এ বিষয়ে আঞ্জুমান আরা, জেলা প্রশাসক নড়াইল বলেন কোন অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হবেনা। তবে এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।