মির্জা মাহমুদ হোসেন রন্টু নড়াইল : নড়াইল সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নের বেনাহাটি গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অরুণ কুমার রায়কে (৭২) গ’লা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত অরুণ রায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠকের স্বা’মী। খুলনা থেকে শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে স্বা’মীকে ডাকাডাকি করে না পেয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে স্বা’মীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান স্ত্রী নিভা রাণীসহ পরিবারের সদস্যরা।
শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিভা রাণী পাঠক জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃ’দ্ধির পর থেকে তার স্বা’মী গ্রামের বাড়ি বেনাহাটিতে একাই থাকতেন। চাকুরির সুবাদে তিনি খুলনায় থাকেন। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলে, ব’উমাসহ (ছেলের স্ত্রী) গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। বাড়িতে এসে স্বা’মীকে অনেক ডাকাডাকির পরও ঘর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ছাদ দিয়ে ভেতরে ঢোকেন নিভা রাণীর ছেলে। ঘরে গিয়ে বাবার গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান তিনি।
নিভা রাণী পাঠক বলেন, ঘরে প্রবেশের মূল ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় পেয়েছি। দুর্বৃ’ত্তরা কীভাবে ঘরে প্রবেশ করেছে, তা এই মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না। তবে ছা’দ দিয়ে ঘরে প্রবেশের জা’য়গা খোলা ছিল। এছাড়া ঘ’রের পেছনের একটি প্রবেশ পথ ও খোলা দেখা গেছে। ঘর থেকে কোনো কিছু খো’য়া গেছে কিনা, তা দেখা হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খুলনার বাটিয়াঘাটা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরে অবসরে যান অরুণ রায়। স্ত্রী নিভা রাণী পাঠকের চাকুরিও শেষ পর্যায়ে। ছেলে প্রকৌশলী এবং মেয়ে চিকিৎসক।
নড়াইল সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম জানান, কখন কে বা কারা এ হত্যাকান্ডের ঘ’টনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় ঘর থেকে তেমন কিছু খো’য়া যাও’য়ার আ’লাম’ত পাওয়া যায়নি।
হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বিপুল বিশ্বাস, বিধান রায় ও অরবিন্দু দাস নামের বাড়ির তিন কেয়ারটেকার সহ ৪ জনকে আ’টক করেছে। এদিকে শনিবার (২৪ অক্টোবর) ময়নাতদন্ত শেষে দুপরে নিহতের বাড়ি বেনাহাটিতে মরদেহ পৌছালে এই শিক্ষককে একনজর দেখতে এলাকার শতশত লোক ভীড় করে। হত্যার ঘটনা তদন্তে শুক্রবার রাত থেকে তদন্তে নেমেছে পিবিআই, সি আইডি ও র্যাব।
স্বজনেরা জানান, তাঁর স্ত্রী নিভা রানী পাঠক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) খুলনার উপপরিচালক। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ইন্দ্রোজিৎ রায় রবি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে ইন্দ্রিরা রায় ডাক্তার। ৩ জ কেয়ারটেকার নিয়ে বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ছেলে ইন্দ্রোজিৎ রায় বাড়িতে এসে কলাপসিবল গেটের কলিং বেল চেপে কোনো সা’ড়া পা’চ্ছিলেন না। এরপর তিনি বাসায় ঢুকে দোতলায় বাবার বসতঘরে গলাকাটা লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
খুলনার বঠিয়াঘাটা সরকারি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে অবসর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একাই থাকতেন অরুন রায়। বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী নিভা পাঠকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের পর তার মোাবাইল বন্ধ পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ছেলে ও স্ত্রী বাড়িতে এসে কোন সা’ড়াশ’ব্দ পাননি। পরে দোতলায় উঠে বাবার বসতঘরে খাটের পাশে গলাকাটা লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের স্ত্রী পাঠক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) খুলনার উপপরিচালক নিভা রানী এ ঘটনায় অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্বা’মী একজন নিরীহ লোক, এলাকায় তার কোন শত্রু থাকতে পারে না। কে বা কারা তাকে এভাবে হত্যা করলো তার বিচার তো চা’ইতেই হবে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
নড়াইলের অতিঃপুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ ইমরান জানান, ঘটনাটি একটি আননোন মা’র্ডার। তদন্ত চলছে, আজ শনিবার হত্যা মামলা হবে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে শত্রুতা বশত কেউ তাকে হত্যা করতে পারে। পুলিশ ছাড়াও পুলিশের অন্যন্যা ইউনিট (সিআইডি, পিবিআই) ও নানা ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত কাজ করছে।