মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, খুলনা সদর প্রতিনিধি
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করা সাংবিধানিক অধিকার। সরকার জনগণের এ অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। পুলিশ দিয়ে সভাসমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। জনতার অধিকার নিয়ে সরকার কানামাছি খেলছে। জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করে ক্ষমতায় যাওয়ার লালসা পূরণ হবে না। নির্বাচনের নামে তামাশা ও প্রহসন করবেন না। প্রয়োজন হলে গণভবন থেকে তালিকা প্রকাশ করে দিন। তবু দেশের সম্পদ নষ্ট করে কোনো নাটক করবেন না। তিনি বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করার জন্য। আমার সন্তানকে বাবুর্চি, ধোপা, নাপিত বানানোর জন্য তথা ভারতের গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করার জন্যই শিক্ষা কারিকুলামে আলুভর্তা আর ডিমভাজির শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের নামে আসন ভাগাভাগি ও ডামি নির্বাচনের নামে দেশে তামাশা শুরু হয়েছে। ১৪ আর ১৮ মতো আরেকটি কালো অধ্যায় রচনার জন্য শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার ওঠেপড়ে লেগেছে। একতরফা ও পাতানো নির্বাচন হলে দেশ ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হবে। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের আহাজারি আরও বৃদ্ধি পাবে। শিল্প-কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চরম হুমকির মুখে পড়বে। মানবতা বিপর্যস্ত হবে। দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে।
দেশ বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার লালসার বিরুদ্ধে জনগণকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। গণবিরোধী এ তফসিল অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।দেশের জনগণ এ অবৈধ তফসিল মানে না। দেশবাসি অবৈধ এ তফসিলের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেছে। ক্রমান্বয়ে রাজপথ আরও উত্তপ্ত হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব আরও বলেন, অবৈধ সরকার জাতিসত্তাবিরোধী শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের চূড়ান্ত খেলায় মেতে ওঠেছে। এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বিনাব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে। হাজার বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে। ছাত্র ও যুবক শ্রেণি ক্রমান্বয়ে নৈতিক পদস্খলনের দিকে ধাবিত হবে। দেশ নতুন করে নেতৃত্ব শুন্য হবে। তিনি সরকারের প্রতি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জাতিসত্তা ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল ও বিতরণ কর্মসূচি বন্ধ করুন।
আজ ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ জুমআ রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত জাতিসত্তাবিরোধী শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও একতরফা পাতানো নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট এম হাসিবুল ইসলাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, ডা. মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, এডভোকেট মুহাম্মদ মশিউর রহমান, ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সেক্রেটারি ডা. শহীদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, মুফতি হাফিজুল হক ফাইয়াজ, ইউসুফ পিয়াস, মাইদুল হাসান সিয়াম, প্রমুখ।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষাবিদের কতো ভয়াবহ অভাব যার বাস্তব প্রমাণ হলো দীপু মনির মতো একজন ডা. আমার দেশের শিক্ষামন্ত্রী। আমাদের লজ্জা হয় এমন শিক্ষামন্ত্রী নিয়ে। আলুভর্তা আর ডিমভাজি মার্কা এ শিক্ষাব্যবস্থা মেনে নেয়া যায় না। ৭ তারিখে জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনের নামে নারক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে। নাটক করতে মন চাইলে আওয়ামীগের মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে উত্তোলন করা টাকা দিয়ে করেন। জনগণের টাকা দিয়ে কোনো নাটক করবেন না। উন্নয়নের নামে জনগণকে ধোকা দেয়া হচ্ছে । এসব উন্নয়ন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা চিবিয়ে খেলেই হয়। জনতার অধিকার নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্টবিরোধী। এ কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সভাসমাবেশর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। ৭ তারিখে নির্বাচন নয় আওয়ামী কাউন্সিল হতে পারে। দলের টাকা খরচ করে কাউন্সিল করেন আপত্তি নেই। কিন্তু দেশের টাকা খরচ করে নিবার্চনের নামে তামাশা করতে দেয়া হবে না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ৭ তারিখের সার্কাস খেলা বন্ধ করা হবে।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। এ সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ও শ্লোগান দিতে থাকে। দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে কর্মীরা শান্ত হলে সেখানে দলের মহাসচিবের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রোগ্রাম শেষ করা হয়। এতে অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, নাগরিক অধিকার কেড়ে নিলে জনতা বিকল্প পথে হাটতে বাধ্য হবে এবং এর সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে