রুহুল আমীন তালুকদার :
ধর্ষণ মামলার আসামী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মাহমুদুল হাসান এরশাদ সহ দুইজনকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
২৪ মে মঙ্গলবার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (সিনিয়র জেলা জজ) আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মোঃ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেলা হাজতে প্রেরণকৃত আসামীরা হচ্ছে, উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের দিগলবাক গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন কুটই’র ছেলে জবলু আহমদ ও একই গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান এরশাদ (মেম্বার)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক মামলার আসামী মাহমুদুল হাসান এরশাদ মেম্বারের সহযোগিতায় তার চাচতো ভাই জবলু আহমদ ও অজ্ঞাতনামা আরো এক আসামী সহ উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের কচকটখাঁ গ্রামের পিতা-মাতা হীন অসহায় এক তরুণীকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে দুইদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে আসামী জবলু। এ ঘটনার শিকার ধর্ষিতা তরুণী বাদী হয়ে গত ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার ধর্ষক জবলু ও তার সহযোগী এরশাদ মেম্বার এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা একজন সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকীর অভিযোগ এনে বিয়ানীবাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অফিসার ইনচার্জ অভিযোগটি থানা প্রাপ্ত হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতান দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত/২০০৩) এর ৭/৯ (১) ৩০ তৎসহ বাংলাদেশ প্যানাল কোড ৫০৬ ধারা মতে মামলা রুজু করেন। যাহা থানার মামলা নং- ৮, জিআর-৫৬/২০২২ইং।
এছাড়াও ২০১৮ ইং সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শেওলা ইউনিয়নের এক স্কুল ছাত্রীকে আব্দুল আহাদ, আলম হোসেন ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন ব্যক্তি অপহরণ করে সিলেট শহরের মেন্দিবাগ এলাকায় বদরুলের বাড়িতে চারদিন আটকে রেখে আব্দুল আহাদ তাকে ধর্ষণ করেছে।
এ ঘটনায় উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের বর্তমান বাসিন্দা মৃত ইসহাক আলীর ছেলে, অর্পিতা ও ধর্ষিতার পিতা আব্দুল জলিল বাদী হয়ে দিগলবাক গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ, সফর আলীর ছেলে আলম হোসেনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে, ৫ অক্টোবর ২০১৮ইং তারিখে বিয়ানীবাজার থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহা থানা মামলা নং- ৩, জিআর-১৩৭/১৮, নারী ও শিশু ৫১৬/২০১৯ ইংরেজি।
কতিপয় অপহরণ ও ধর্ষণকারী আব্দুল আহাদ ও আলমের যোগসাজসে এরশাদ মেম্বার ঘটনার বিষয়টি থানা পুলিশকে না জানিয়ে বরং আপোষ মীমাংসার কথা বলে ধর্ষিতার মা-বাবাকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধাগ্রস্ত করে এবং অপহরণ ও ধর্ষণকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এম.এ ওয়াহেদ গাজী উপজেলার দিগলবাক গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ, সফর আলীর ছেলে আলম হোসেন ও একই গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান এরশাদ এর বিরুদ্ধে ২০১৯ইং সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত/২০০৩) এর ৭/৯ (১) ৩০ ধারা মতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-৪, বিয়ানীবাজার সিলেটে চার্জশীট দাখিল করেন।
পরে মামলটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বদলী করা হলে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (সিনিয়র জেলা জজ) আদালতের বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী চার্জশীট গ্রহণ করেন। আগামী ৩ অক্টোবর মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য্য করেছেন।
উল্লেখ্য, দুইটি ধর্ষণ মামলা ছাড়াও এরশাদ মেম্বারের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার জিআর-৯/২০১৯ইং, সিআর-১৫৯/২০২১ইং (চলমান) ও জিআর-৬৭/২০১৮ইং সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। তার স্বভাব চরিত্র ভালো নয়, সে অত্যান্ত জঘন্য ও ভয়ংকর প্রকৃতির লোক। ইতিমধ্যে সে একাধিকবার কারাভোগও করেছে। জেল হাজতে যাওয়া-আসা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এমন ঘৃণিত তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সহ স্থানীয় সরকার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সুধীমহল।
Leave a Reply