মিজানুর রহমান মিজান
পত্রিকা,টিভি খুললেই এখন খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি খবর সর্বাগ্রে নজর কাড়ে।ধর্ষণ এখন মহাব্যাধি রুপে আমাদের সমাজে অহরহ হয়ে গেছে। এ নিয়ে শিশু থেকে যুবতী, মধ্যবয়সী থেকে বৃদ্ধা কেউ বাদ পড়ছেন না। একটি ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটির খবর আসছে। যেন ধর্ষণের হিড়িক পড়ে গেছে। পিতা হয়ে নিজ কন্যাকে করছে ধর্ষণ। সেই জাহিলিয়াত যুগের কথাই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার কর্তৃক তিন লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিল তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও সত্যি।তবে সেটা ছিল ১৯৭১ সালের কথা। কিন্তু আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নারীরা তাদের নিজ দেশের নরপশুদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।তা নিরোধ করতেই হবে।আর তার ভয়াবহতার একটিই মুল কারণ বলে আমি মনে করি।তাহচ্ছে ডিশ এন্টিনার মাধ্যমে যে যৌন সুড়সুড়ি দেয়া হয়, সমাজের উঠতি ছেলেমেয়েদের তারা কখনো প্রতিশোধের নেশায়, কখনো এডভেঞ্চার মনে করে, কখনো বন্ধুদের প্ররোচনায়, কখনো কৌতুহলী হয়ে এ সব কাজে লিপ্ত হয়।আবার সন্ত্রাসী মাস্তানদের দ্বারা ও সংগঠিত হয়ে থাকে।তবে যারা এ কাজ করে তারা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মান্য করে না।সুতরাং আমরা বলতেই পারি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মান্য, পালন , অনুসরণ একান্ত অপরিহার্য।
বর্তমান সময়ে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষনের বেশ কয়েকটি বিষয় আলোড়ন সৃষ্টি করে। যার ফলে জনগণের দাবী হয়ে উঠে ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত। জনগণের দাবীর প্রতি প্রধান মন্ত্রী সম্মান দেখিয়ে নীতি ও নৈতিকতায় ফাঁসির আইনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আনন্দিত আইনটি হওয়ায় এবং তা সময়োপযোগী ও মহতী উদ্যোগ। এ রকম আইনের যথার্থতা, প্রয়োগ, ও বাস্তবায়ন জরুরী।তবে একথা ভুলে গেলেও আমাদের চলবে না, আমাদের চতুর্দিকে খেয়াল রাখা অপরিহার্য।আমাদের দেশে আইন করা হয়েছিল, ধূমপান নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ আইন।কিন্তু আইনটা পাশ হওয়ার বেশ কিছুদিন পরে এসেও স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে প্রকাশ্যে ধূমপান করাটা কি আদৌ কমেছে?যে কোনো জনকল্যাণকর আইনের কার্যকারিতা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট জনগণের ঐ আইনটির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তা মেনে চলার প্রবণতার উপর।আর তা না হলে ঐ আইন বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে।তা না হলে ঐ আইন গুরুত্ব হারাবে এবং অকার্যকর একটা কেতাবী আইনে পরিণত হয়ে শুধু কাগজ পত্র ও আইনি পুস্তকেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে।
অন্যদিকে হুজুগে বাঙ্গালী বলে আমাদের একটা দুর্নাম রয়েছে। অনেক সময় কোন কোন কাজের হিড়িক পড়ে যায়।যেমন নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনের কথা।অনেক ক্ষেত্রে এ আইনটির অপপ্রয়োগ বা অপব্যবহারের কথা মনে আছে অনেকেরই। এ আইনের কঠোরতা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেল অন্য যে কোন বিষয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলেই নারী নির্যাতন, যৌতুক আইনে মামলা হয়ে যায়।সুতরাং আমার কথা থাকবে ধর্ষণ আইনের শাস্তি ফাঁসি কার্যকর ও বাস্তবায়নের সাথে সাথে এ ধারাটি ও সংযুক্ত রাখা সমীচীন হবে, যে ধর্ষণ মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। সেক্ষেত্রে যেন মিথ্যা মামলাকারীর ও ফাঁসি দেয়ার বিধান রাখা বা সংযুক্ত করা হয়। তখন মিথ্যা মামলা করার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।অনেক ক্ষেত্রে মানুষ হিংস্র হয়ে গেছে (সব নয়)। পরহিংসা, লোভ, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, বিদ্বেষ এবং অসৎ চরিত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হয়রানিমুলক অনেক মামলা হয়ে থাকে। তা কেউ অস্বীকার বা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না অবশ্যই।একজন নিরীহ, দুর্বল মানুষ এ জাতীয় ঘটনায় সর্বশান্ত হয়ে থাকে।তার আহাজারী আকাশে বাতাসে শুধু আহাজারীর রোদন হিসাবে আবর্তিত হয়। অন্যদিকে প্রেমের কারনে একজনকে দেহ বিলিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে থেকেই। হঠাৎ যে কোন কারনে তা ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘদিন পর ধর্ষণ মামলা করে বসলেন। সে দিক ও বিবেচনা করতে হবে। বিয়ের পূর্বে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন সামাজিক, ধর্মীয় দিক থেকে নিষেধ।সমাজে তা গ্রহণযোগ্য নয়, অসুন্দর বলে বিবেচিত করে।পরিশেষে বলতে চাই আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি সুখী,সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ রুপে দেখতে চাই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সুন্দর ও সমৃদ্ধির পথে। এ দেশের মানুষ হোক মন ও মননশীলতায় অগ্রবর্তী।