পর্ব ২
সংক্ষিপ্ত এই পৃথিবীতে ভোগ বিলাসের জন্য যে সামগ্রী রয়েছে তা নিতান্তই স্বল্প, আখেরাতের তুলনায় খুবই তুচ্ছ ।তাই মহানবী (সাঃ) মানুষকে সংক্ষিপ্ত এই পৃথিবীর ভোগ বিলাসের ভূলে গিয়ে দূর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে এবং আখেরাতের অনন্ত সুখ ও নেয়ামতের প্রতি মানুষকে আহবান করেছেন ।
মহানবী( সাঃ)বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষের পা এক বিন্দু পরিমান নড়তে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত পাঁচটি জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা হবে ।
(১) নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে।(২) যৌবনের শক্তি কোথায় ব্যয় করেছে ।(৩) ধন সম্পদ কোথায় থেকে অর্জন করেছে ।(৪) তা কোথায় খরচ করেছে এবং যে জ্ঞান সে লাভ করেছে তদনুযায়ী সে কতটুকু কাজ করেছে ।
মহানবী ( সাঃ) মানুষদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এ নশ্বর পৃথিবীর তুচ্ছতা এবং অবিনশ্বর আখেরাতের অফুরন্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সকল প্রকার দূর্নীতি থেকে মানুষদেরকে দুরে থাকার আহবান জানিয়েছেন ।
বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার কারণে এবং দুনিয়ার অর্থ মোহে মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় দূর্নীতি ।মহানবী( সাঃ) ভোগ ও তাগের সমন্বয়ে এক সুষম অর্থ ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন যে,এর সফল প্রয়োগ বিশ্বকে দূর্নীতির অতল গহ্বর থেকে তুলে আনতে পারে ।ইসলামের স্বর্ণযুগে মহানবী (সাঃ) এর যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার কারণে কোন মানুষকে দূর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়নি।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ধনীদের ধন সম্পদে গরীব অসহায় ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে” ।এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনের মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) দূর্নীতি প্রতিরোধের আদর্শ উপস্থাপন করেছেন ।
মানুষ সাধারণত দরিদ্র অবস্থা থেকে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে,কিন্তু মহানবী (সাঃ)এ ধরনের বড়লোককে ঘৃণা করেছেন এবং দরিদ্র ব্যাক্তির মর্যাদা ঘোষনা করেছেন ।মহানবী( সাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ আমাকে দরিদ্র জীবন দান কর,দারিদ্রের মতোই মৃত্যু বরণ করতে দাও এবং কিয়ামতে দারিদ্রের সাথেই পূনরূজ্জীবিত কর”।আরো বলেন, গরীবরা ধনীদের থেকে পাঁচশ বছর আগে জান্নাতে যাবে “।এভাবে মহানবী (সাঃ)দারিদ্রের মর্যাদা ঘোষনা করে দূর্নীতির মাধ্যমে বড়লোক হওয়ার প্রতি ভর্ৎসনা করেছেন ।
দুর্নীতির অন্যতম কারণ হলো দেশের প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত যাদের চাকুরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের যোগ্যতা, সততা, নৈতিকতা, খোদাভীতি, কর্তব্যনিষ্টা, দায়িত্বশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যের পথে দৃঢ়তা, দেশাত্মবোধ, বিশ্বস্ততা, অর্থ লোভ, বিমূখতা, সৎচরিত্র ইত্যাদির প্রতি দৃষ্টি রাখা হয় না। তাই দুর্নীতির সফল প্রতিরোধের জন্য আল্লাহ্র ঘোষণা, “যে লোকের অন্তর স্বরনশুন্য, আল্লাহর আনুগত্য ভাবধারাহীন এবং বন্ধন নিয়ন্ত্রণহীন কামনা বাসনার অনুসারী এ কারণে যার কাজকর্ম বাড়াবাড়ি পূর্ণ তুমি যার অনুসরণ কখনোই করবে না”।
এই ক্ষেত্রে মহানবী (সাঃ) তিনটি জিনিসকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিতেন, যথা- ১. দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতা, ২. বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা, ৩. সততা সৎচরিত্রতা ও দুনিয়া বিমূখতা। সরকার ও প্রশাসনিক কাজে এই সমস্ত গুণের অধিকারী লোকের নিয়োগের মাধ্যমে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কাজ করেন।
প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেতন দুর্নীতির প্রতি ব্যক্তির উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। তাই মহানবী (সাঃ) সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, শ্রমিক তথা সকল দায়িত্ব পালনকারীর ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করেছেন। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, “এরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। কারো ভাই,তার অধীনে থাকলে তার উচিৎ নিজে যা খাবে তাই তাকে খাওয়াবে। নিজে যা পরবে তাই তাকেও পরতে দেবে, এবং তাকে দিয়ে এমন কাজ করাবেনা যা তার ক্ষমতার বাইরে। কোনোভাবে তার উপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও তাকে সে কাজে সাহায্য করবে। এই হাদিসের আলোকে মহানবী (সাঃ) সর্বনিম্ন মজুরী হার নির্ধারণে নীচের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতেন। যেমন শ্রমিক তার পারিশ্রমিক দিয়ে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ এবং মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারে সাধারণ জীবনমান রক্ষা, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে। তার ফলে শ্রমিকদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হবেনা।
সমুজ আহমদ সায়মন
লেখক ও সাংবাদিক ।