রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ প্রতিবছর বন্যার পর শুরু হয় তিস্ত নদীর ভাঙ্গন। তীব্র ভাঙ্গনে দিশেহারা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ১২ গ্রামের মানুষজন।গত কয়েকদিনের বন্যায় সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না গ্রামের ৭টি বাড়ি ও কয়েকশ একর জমি ও ভিটেমাটি, পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে ৪টি বাড়ি ও ডাউয়াবাড়ীতে ৮টি বাড়ি এবারের বন্যায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ও আরো শতাধিক ঘরবাড়ি, স্কুল, ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা হুমকিতে রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না গ্রামের ১, ২ও ৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তা নদীর ভাঙ্গন মারাত্বক আকার ধারন করার বাস্তব দৃশ্য চোখে পড়ে। ওই সব এলাকার মানুষজনের দুঃখ – দুর্দশা বাস্তবে না গেলে জানা যাবেনা। দুঃখ, কষ্ট ও উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের জীবন। অনেকে তাদের পালিত গরু, ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। দেখতে দেখতে জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেকে তাদের আবাদী আমন ধানের চারা গো খাদ্যের জন্য কেটে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙ্গনে পাটগ্রাম উপজেলাধীন দহগ্রাম ইউনিয়নে পশ্চিমবাড়ি,নতুনহাট,আদর্শগ্রামে বসতভিটে হারিয়ে শত শত পরিবার রাস্তার ধারে, খোলা আকাশে মানববেতর জীবন যাপন করছে। সরকারিভাবে তাদের পূর্নবাসনের আশ্বাস দিলে,আর্দশগ্রামে ২৫০ পরিবারের ঠাই মিলে, কিন্তু একটু বর্ষনেই আদর্শ গ্রাম নদীর পানি ভেঙ্গে বিলিন হওয়ার উপক্রম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে সিসিব্লোক তৈরির কাজ করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কাজের নেই কোন অগ্রগতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী লিজু হাসান গতবছর ভয়াবহ বন্যা দেখতে আসা পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল কে বলেন, তিস্তা নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা ত্রাণ চাইনা, দহগ্রাম ইউনিয়নকে রক্ষা করতে স্থায়ী একটা বাঁধ যদি “জয় বাংলা চত্তর” হয়ে সর্দারপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দেওয়া যায় তাহলে দহগ্রাম নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা সম্ভব। আমি শুনেছি তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে সরকারের মহা পরিকল্পনা রয়েছে। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তার দু’ধারে বাধ দিয়ে নদীর ভাঙ্গনরোধ, তিস্তার পাশ্ববর্তী এলাকা সৌন্দর্যময় করে স্থানীয় জনগনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এটা স্বপ্ন নয়, জীবদ্দশায় বাস্তবে দেখতে চাই। এ পরিকল্পনা বাস্তবে রুপ নিলে চাকুরী ছাড়া পৈত্তিক সৃত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই সৃষ্টি করতে পারবো। দহগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামল হোসেন সাম্প্রতিক সময়ে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করে বলেন,দহগ্রাম ইউনিয়ন বাংলাদেশের মানচিত্রে রাখতে হলে নদী ভাঙ্গনরোধে এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে,না হলে বাংলাদেশের মানচিত্র হতে দহগ্রাম মুছে যাবে।
ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হাতিবান্ধা চর সিন্দুর্না গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, চোখের সামনেই বাপ দাদার ভিটে বাড়ি ভেঙ্গে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যে কিনারায় বসতবাড়ি করি সেখানেই আবার নতুন করে ভাঙ্ন দেখা দেয়। এভাবে ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। তিস্তার ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবানও ওই ব্যক্তির।
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরল আমিন বলেন, এবারের বন্যায় পানি বৃদ্ধি পায়নি, কিন্তু নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন মারাত্বক আকার ধারন করেছে। এবারের ভাঙ্গনে সিন্দুর্না ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ৭টি বসতবাড়ি ও কয়েকশো একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, আরো নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গছে। থামছেনা তিস্তার ভাঙ্গন।হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হয়েছে। এবারে বন্যায় তিন ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ১৯টি বাড়ী ভাঙ্গনের তালিকা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ৪টি পরিবারের জন্য এক বান্ডিল ঢেউটিন ও তিন হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। অন্যান্যদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে।লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, সোমবার সারাদিন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের জন্য করণীয় সবকিছু করা হবে।