মো. নাঈম ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের বাদলকাঠি গ্রামের কুনিহারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৫ পরিবার বসবাস করে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঝালকাঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন নিম্ম আয়ের এসব পরিবারের সদস্যরা ঘর পেয়ে বেশ খুশিই ছিলো। কিন্তু এখন তাদের কষ্টের যেনো শেষ নেই। প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই শতাংশ খাস জমিতে আধা-পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হলেও, তাদের জন্য খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ৯ টি ব্যরাকের সামনে ৯টি স্যালো টিউবওয়েল থাকলেও খাবার পানির জন্য এখানে কোনো গভীর নলকুপ নেই। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘরের চাবি নিয়ে নিম্ম আয়ের ৪৫ টি পরিবার এই আশ্রয়নের স্বপ্নের ঘরে বসবাস শুরু করে। কিন্তু ৫ মাস কেটে গেলেও তারা এখনো এখানে বৈদ্যুতিক আলোর মূখ দেখেনি। ওখানে পৌছানো হয়নি বিদ্যুতের খুটি। গ্রীষ্মের কাঠফাটা গরম আর প্রচন্ড তাপদাহে বৃদ্ধ এবং শিশুদের কষ্টের যেন সীমা নেই। হাত পাখাই এদের একমাত্র ভরসা। সুর্য ডোবার পরে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে এই এলাকায় তখন ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ঘরে ঘরে শিশুদের পড়তে হচ্ছে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে।
এখানকার ৪ নং ব্যারাকের ১৯ নম্বর ঘরের বাসিন্দা রাশিদা আক্তার (৩০) বলেন, আমার স্বামী ইটের ভাটায় কাজ করে, আগে থাকতাম মানসের বাড়ি, এহন থাকি নিজের বাড়ি কিন্তু পানি আর কারেন্ট কোনোডাই মোগো নাই। গরমের চোডে রাইতে মাইয়া পোলা লইয়া মাঠে বইয়া থাহি।
১নং ব্যরাকের ৩ নং ঘরে থাকেন রনি বেগম (২৬) তিনি বলেন, বাদলকাডি ইসকুল দিয়া খাওয়ার পানি আনি, হেতে মোগো অনেক কষ্ট অয়। পাশের ঘরের বুলু বেগম (৩০) বলেন মোরা খালের পানি ফিককিরি দিয়া খাই।
৮ নং ব্যারাকের ৪০নম্বর ঘরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি দে (৬৮) বলেন, আমি পানি আনি উত্তর দিকের মাঝি বাড়ি থেকে। কিন্তু তারা সবসময় পানি আনা পছন্দ করে না, তাই মাঝে মাঝে গাজীবাড়ি থেকেও খাবার পানি আনি।
২ নাম্বার ব্যরাকের ১০ নাম্বার ঘরে থাকেন পরী বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, মোবাইল চার্জ দিতে মাইনষের বাড়ি যাওয়া লাগে, পানি আর কারেন্ট ছাড়া মোগো মরোণ।
চা দোকানী মাহমুদা বেগম (৩০) ২ ছেলে সন্তান নিয়া ১নং ব্যরাকের ২ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, ৯ডা ব্যারাকে ৪৫ ঘরে পোলাপান লইয়া প্রায় আড়াইশো মানু। সবাই অন্য বাড়ি আনতে যায় আর হেই বাড়িওয়ালা মন্দও কয়। আমনেরা সাংবাদিকরা একটু লেহেন যাতে আমরা পানি আর কারেন্টু পাই।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে ৯ ব্যারাকের সামনে থাকা ৯টি স্যালো টিউবওয়েলের ৪ টি নষ্ট। বাকি গুলো থেকেও পানি ওঠে কম। এখানকার ১৮ টি বাথরুমের ৬টির দরজা নেই, যা আরো আগেই ভেঙ্গে গেছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
সাবেকুন্নাহার জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তারা জায়গা পরিদর্শন করে জানিয়েছে, কুনিহাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ পৌছাতে তাদের সারে সাত লাখ টাকা খরচ হবে। এই টাকা পেলে তারা কাজ শুরু করবে।
ঝালকাঠি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো. সাদেক জামান বলেন, আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। এটা যেহেতু আশ্রয়ণ প্রকল্প, সেহেতু ঐ প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দিতে হবে। বরাদ্দের অর্থ এবং অর্ডার আসলে আমরা দ্রুত কুনিহাড়ি আশ্রয়নে বিদ্যুতের সংযোগের কাজ শুরু করবো।